চলতি সেপ্টেম্বর মাসে একাধিক সমাবেশ ও পাঁচটি রোডমার্চ করবে বিএনপি। এরপর অক্টোবরে চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাওয়ার চিন্তা দলটির। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে চলতি মাসটি গণসংযোগের শেষ ধাপ হিসেবে নিচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তারই অংশ হিসেবে আগামী শুক্রবার ঢাকায় সমাবেশ এবং শনিবার থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তারুণ্যের রোডমার্চ হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এর লক্ষ্য তরুণ-যুবসমাজকে জাগিয়ে তোলা এবং সরকার হটানোর চূড়ান্ত আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা। তবে চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচির পাশাপাশি এই মুহূর্তে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি দেশের বিচারব্যবস্থার দিকে। তাঁরা মনে করছেন, বিরোধী দলকে দমনে সরকার আদালতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে সারা দেশে বিএনপিসহ বিরোধী দলের অসংখ্য নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নানা মেয়াদে কারাদণ্ডের রায় আসছে। দলের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলায় সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে আগামী শুক্রবার বিকেলে ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে বিএনপি। সমাবেশের অনুমতি চেয়ে গত রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের (ডিএমপি) কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যদিও ডিএমপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করবে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক গত রাতে বলেন, ‘মিথ্যা’ মামলায় মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানকে সাজা দিয়ে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদসহ অনেক নেতা-কর্মীকে কারাবন্দী করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে এ সমাবেশ হবে। গত জুন ও জুলাই মাসে সারা দেশে ছয়টি বিভাগীয় শহরে তারুণ্যের সমাবেশ করেছিল বিএনপির তিনটি ছাত্র ও যুবসংগঠন—জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। এবার এই তিন সংগঠন পাঁচটি তারুণ্যের রোডমার্চ করবে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও রংপুরে। ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার রংপুর থেকে এই রোডমার্চ কর্মসূচি শুরু হবে। শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ১৬ সেপ্টেম্বর রংপুর শহর থেকে যে রোডমার্চ শুরু হবে, সেটি সৈয়দপুরের দশমাইল হয়ে দিনাজপুরে গিয়ে শেষ হবে। পরদিন ১৭ সেপ্টেম্বর বগুড়া থেকে রোডমার্চ শুরু হয়ে সেটি সান্তাহার, নওগাঁ হয়ে রাজশাহী নগরে গিয়ে শেষ হবে। তিন দিন বিরতি দিয়ে ২১ সেপ্টেম্বর আবার সিলেটে রোডমার্চ। ভৈরব বাজার থেকে এই রোডমার্চ শুরু হয়ে সেটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার হয়ে সিলেটে গিয়ে শেষ হবে। আবার ২৬ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ থেকে রোড মার্চ শুরু হয়ে যশোর, নোয়াপাড়া হয়ে খুলনায় যাবে। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের উদ্দেশে রোডমার্চ যাত্রা করবে। এটি কুমিল্লা থেকে শুরু হয়ে ফেনী, মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে শেষ হবে। এর আগে সারা দেশে পাঁচটি তারুণ্যের সমাবেশ শেষে গত ২২ জুলাই ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশ হয়। সেই সমাবেশ থেকে ২৮ আগস্ট ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। রোড মার্চ কর্মসূচির অন্যতম আয়োজক সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ বলেন, ‘দেশের ভোটাধিকারবঞ্চিত তরুণদের চলমান আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে আমরা তারুণ্যের সমাবেশ করেছি। এখন চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে তরুণ-যুবকদের উজ্জীবিত করতে, রাজপথে আনতে এই রোডমার্চ কর্মসূচি নিয়েছি।’সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এবার তারুণ্যের রোডমার্চ শেষে অক্টোবর থেকে চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাওয়ার চিন্তা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। দলটির শীর্ষ নেতারা চলতি সেপ্টেম্বর মাসটিকে গণসংযোগের শেষ ধাপ হিসেবে নিচ্ছেন। সরকার হটানোর ‘এক দফা’ দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে তারুণ্যের রোডমার্চকে গণজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ কর্মসূচি হিসেবে দেখা হচ্ছে।