সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার নব নির্বাচিত পরিষদ নতুনদের দখলে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী ২০ জন প্রার্থীর মধ্যে মেয়র সহ ১২ জনই নতুন মুখ। এর মধ্যে মেয়র পদে বিজয়ী প্রার্থী নতুন হওয়ার সাথে একজন নারী। ৫টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩ জন এবং ১৫টি ওয়ার্ডের সাধারন কাউন্সিলর পদেও ৮ জন নতুন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এ হিসেব অনুযায়ী এবারের পরিষদে নতুনরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
স্বাধীনতা উত্তর সৈয়দপুর পৌরসভার একাদশতম পরিষদের এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৫ জনের ৪ জনই ছিল পুরুষ। যাদের ৩ জন ইতোপূর্বে এ পদে প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু কখনো মেয়র হননি। এর একজন হলেন, ধানের শীষের প্রার্থী জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি হাজী রশিদুল হক সরকার। যিনি সাবেক এমপি ও বর্তমান মেয়র অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকারের ভাই। পেয়েছেন ১০৯৭৫ ভোট।
অন্য দুইজন হলেন লাঙলের প্রার্থী জাতীয় পার্টির উপজেলা আহ্বায়ক ও ইকু গ্রুপের এমডি শিল্পপতি সিদ্দিকুল আলম (৯৬৩৩)। এবং হাতপাখা প্রতিকের প্রার্থী ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা সাধারন সম্পাদক হাফেজ নুরুল হুদা (১০৪৩)। আরেকজন ছিলেন তরুণ প্রজন্মের নতুন মুখ স্বতন্ত্র প্রার্থী পরিবহণ ব্যবসায়ী রবিউল আউয়াল রবি (মোবাইল ফোন)। তিনি পেয়েছেন ১০৯২ ভোট।
এদেরকে টপকে একমাত্র নারী ও সম্পূর্ণ নতুন হয়েও প্রথমবারেই বাজিমাত করেছেন নৌকার প্রার্থী রাফিকা জাহান আকতার বেবী। ভোটের তফশিল ঘোষনার প্রাক্কালে স্বামী সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আখতার হোসেন বাদলের মৃত্যতে প্রধানমন্ত্রীর আশির্বাদপুষ্ট হয়ে সরাসরি মনোনয়ন পান। নির্বাচন করে তিনি সৈয়দপুরের ৬৩ বছরের ইতিহাসে এবং নীলফামারী জেলায় প্রথম নারী মেয়র হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তিনি পেয়েছেন ২৮২৭৮ ভোট।
এদিকে ৫টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ২১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে বর্তমান পরিষদের ৫ জন মহিলা কাউন্সিলরও ছিলেন। শুধু ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সাবিয়া সুলতানা (দ্বিতীয় বার) এবং ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের জাহানারা পারভীন (পঞ্চম বার) পূনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। তারা ভোট পেয়েছেন যথাক্রমে ৫৫১৩ ও ৫০৮৬। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন পারভীন নাজ (৪১৮১ ভোট) ও রুপা বেগম (৩২১৮ ভোট)।
বাকী ৩ টিতে নতুন মুখ হয়ে এসেছেন ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে ইয়াসমিন পারভীন (৪৪৬০)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নিলুফার ইয়াসমিন (৩৫৫৬ ভোট)। এখানে বর্তমান মহিলা কাউন্সিলর সুমিত্রা রানী (কনিকা সরকার) পেয়েছেন ১৯৬৪ ভোট। ১০, ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ডে আফরোজা ইয়াসমিন মঞ্জু (৪৫৮১)। নিকটতম বর্তমান মহিলা কাউন্সিলর মিনারা বেগম (৩১৩৪)। এবং ১৩, ১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ডে মোছাঃ রুবিনা সাকিল (২৪৭৯)। নিকটতম
বর্তমান মহিলা কাউন্সিলর জোসনা বেগম (১৯০৩)। এই ৩ জন ইতোপূর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এবারই প্রথম নির্বাচিত হয়েছেন।
অপরদিকে ১৫টি ওয়ার্ডে ৮৭ জন প্রার্থী সাধারন কাউন্সিলর পদে ভোটের লড়াইয়ে অংশ গ্রহন করেন। এর মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডেই নতুন প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন কাউন্সিলররা হলেন ২ নং ওয়ার্ডে মোস্তাফিজুর রহমান সরকার মুন্না (১৭৯৪ ভোট)। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাহাতাব উদ্দিন (৬৭২ ভোট)। এখানে বর্তমান কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা পেয়েছেন ৬৬০ ভোট। ৩ নং ওয়ার্ডে আনোয়ারুল ইসলাম মানিক (১৪৭৯ ভোট)। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান কাউন্সিলর জিয়াউল হক জিয়া (১২৪৫ ভোট)।
৫ নং ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম রয়েল। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আকতার হোসেন ফেকু (৯৬১ ভোট)। এ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শেখ মোহন পেয়েছেন ৪৩৫ ভোট। ৬ নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী (১৫৫৬ ভোট) এবার দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাজিদ ইকবাল (৯১৪ ভোট)। এখানে বর্তমান কাউন্সিলর শাহিনুর ইসলাম মিঠু পেয়েছেন ৪০৬ ভোট।
৮ নং ওয়ার্ডে বেলাল আহমেদ (১৪৬৬ ভোট)। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মহসিন (১১৫৮ ভোট)। বর্তমান কাউন্সিলর আল মামুন সরকার পেয়েছেন ৫৪০ ভোট। ৯ নং ওয়ার্ডে ফরহাদ হোসেন (৮৬৪ ভোট)। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আমিনুল ইসলাম সরদার (৭০৬ ভোট)। বর্তমান কাউন্সিলর আসগর আলী পেয়েছেন ৫৭৯ ভোট। ১৪ নং ওয়ার্ডে জোবায়দুর রহমান শাহীন (১৫২৫ ভোট)। নিকটতম বর্তমান কাউন্সিলর আবিদ হোসেন লাড্ডান (৫০২ ভোট)। ১৫ নং ওয়ার্ডে আবুল কাশেম দুলু (১২৩৩ ভোট)। নিকটতম বর্তমান কাউন্সিলর তারিক আজিজ (৬৫৩ ভোট)।
অন্য ৭ টি ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলররাই পৃণরায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে পঞ্চম বার নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড করেছেন ৭ নং ওয়ার্ডের শাহিন আকতার। তিনি পেয়েছেন ১৩২০ ভোট। তার নিকটতম একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী কায়সার আলী পেয়েছেন ১২৭৯ ভোট। একইভাবে রেকর্ড তৃতীয় বার কাউন্সিলর হয়েছেন দুইজন।
তারা হলেন ৪ নং ওয়ার্ডে জোবায়দুল ইসলাম মিন্টু। তিনি পেয়েছেন ১৫৯৪ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক কাউন্সিলর রাজু আহমেদ (১০৭৮ ভোট)। এবং ১১ নং ওয়ার্ডে এরশাদ হোসেন পাপ্পু পেয়েছেন ১৪৭৫ ভোট। নিকটতম শফিউর রহমান বাবু (১৪২১ ভোট)।
এছাড়াও ১ নং ওয়ার্ডে শাহিন হোসেন (দ্বিতীয় বার)। তিনি পেয়েছেন ১৪৯১ ভোট। নিকটতম নুরুল আমিন প্রামাণিক (১৪৭২ ভোট)। ১০ নং ওয়ার্ডে দ্বিতীয় বার নির্বাচিত মনোয়ার হোসেন হায়দার পেয়েছেন ১৭৮৭ ভোট। নিকটতম ডাঃ আরসাদ আলী (১৩৪২ ভোট)। ১২ নং ওয়ার্ডে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী খালিদ আজম (৮৪৮ ভোট) কে পরাজিত করে আবারও কাউন্সিলর হয়েছেন আব্দুল খালেক সাবু। তিনি পেয়েছেন ১৩০০ ভোট। ১৩ নং ওয়ার্ডে সৈয়দ মঞ্জুর আলম পেয়েছেন ১৬৩৪ ভোট। নিকটতম ইকবাল হোসেন গুড্ডু (৮৩৯ ভোট)। (ছবি আছে)