সাত বছরের মহাকাশ যাত্রা শেষে এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা বৃহত্তম গ্রহাণুর নমুনা বহন করে যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ মরুভূমিতে অবতরণ করেছে নাসার ক্যাপসুল। ভারতীয় সময় রবিবার রাত ৮টা ২২ মিনিটে আমেরিকার উটাহ মরুভূমিতে অবতরণ করে রিটার্ন ক্যাপসুলটি। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, তারা নমুনাটি নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। এটি সৌরজগতের গঠন এবং কীভাবে পৃথিবী বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে সে সম্পর্কে ভালো ধারণা দেবে।
২০১৬ সালে উৎক্ষেপণের চার বছর পর প্রোবটি গ্রহাণু বেন্নুতে অবতরণ করে এবং এর পাথুরে পৃষ্ঠ থেকে প্রায় নয় আউন্স (২৫০ গ্রাম) ধুলো সংগ্রহ করে। নাসা জানিয়েছে, মহাকাশে এই প্রথম কোনও গ্রহাণু থেকে এত বেশি পরিমাণে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর আগে জাপানও দু’-দু’বার মহাকাশের গ্রহাণু থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু তার পরিমাণ ছিলো খুবই কম।
বেন্নু নামের গ্রহাণুটি আবিস্কার হয় ১৯৯৯ সালে। এটি পৃথিবী থেকে ২৯.৩ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, আকারে পাঁচটি ফুটবল মাঠের সমান।
এতদিন গ্রহাণুর চারদিকে চক্কর দিয়ে তার হাল হকিকত বুঝেছে, দফায় দফায় ছবি পাঠিয়েছে পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশনে। রুক্ষ, বন্ধুর, এবড়ো খেবড়ো বেন্নুর পিঠে গতিবেগ সামলে অবতরণ করা ছিল একপ্রকার অসম্ভব ব্যপার। অজানা গ্রহাণুর বুকে বিপদের সম্ভাবনাও ছিল। মহাজাগতিক রশ্মি, ধূমকেতু, উল্কা প্রায়ই আছড়ে পড়ে বেন্নুতে। কিন্তু সেসব বিপদ কাটিয়ে নাসার মহাকাশযান অসাধ্য সাধন করেছে। সফল অবতরণ করেছে বেন্নুর বুকে।
বিজ্ঞানীরা বলেন, ২১৩৫ সালে পৃথিবীর উপর প্রায় হামলে পড়বে বেন্নু। কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে এসে পড়বে পৃথিবীর খুব কাছাকাছি। অত কাছে এসে পড়ার ফলে পৃথিবীর অত্যন্ত জোরালো অভিকর্ষ বলের টান অনেকটাই বাঁকিয়ে চুরিয়ে দেবে গ্রহাণু বেন্নুর কক্ষপথকে। তারই জেরে আগামী শতাব্দীর শেষাশেষি বেন্নু খুব জোরে ধেয়ে এসে সরাসরি ধাক্কা মারতে পারে পৃথিবীকে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, বহু কোটি কোটি বছর আগে যে ভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ডাইনোসররা, বেন্নুর ধাক্কায় তেমন দশাই হতে পারে পৃথিবীর।
আগামী শতাব্দীতে যখন পৃথিবীর খুব কাছে এসে পড়বে বেন্নু, তখন যে ভাবে সম্ভব তার কক্ষপথ কিছুটা ঘুরিয়ে দিতে চাইছে নাসা। এতে করে বেন্নুর ধাক্কাটা এড়ানো সম্ভব হবে বলে আশা করছে নাসা।