তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কোনো ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন বানচাল করা যাবে না, যথাসময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ঐতিহাসিক সোহরওয়ার্দী উদ্যানে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আনজুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারিয়া ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি আয়োজিত আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশে বক্তৃতাকালে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, “আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ দেশে নির্বাচন ভন্ডুল করে ‘হামিদ কারজাই’ মার্কা সরকার গঠনের অপচেষ্টা কখনো বাস্তবায়িত হবে না। ২০১৪ সালে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, বলা হয়েছিল সরকার টিকবে না। আমাদের সরকার পূর্ণ পাঁচ বছর দেশ পরিচালনা করেছে। ২০১৮ সালেও ষড়যন্ত্র হয়েছিল, এবারও আমরা দু’মাসের মাথায় পাঁচ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত যতই দেশটাকে বিশ্ববেনিয়াদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করুক, নির্বাচন যথাসময়েই হবে। বিএনপি আসুক বা না আসুক, আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজক সুপ্রিম পার্টিসহ বহু রাজনৈতিক দল ও জনগণের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
এ সময় দেশরক্ষা, ওলী-আউলিয়াদের সম্মান রক্ষা ও ফেতনা সৃষ্টিকারীদের রুখে দাঁড়ানো মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে ইসলাম ও আলেম-ওলামাদের কল্যাণে যখন অভাবনীয় কাজ করা হয়েছে এবং হচ্ছে তখন দেশে ইসলামের নামে হানাহানির অপচেষ্টা চলছে। তিনি মনে করিয়ে দেন, এ দেশে ইসলাম কোনো যুদ্ধ বিগ্রহের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, ওলী-আউলিয়ারা মানুষের মন জয় করে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় এনেছেন। কিন্তু আজ জামায়াতে ইসলামী এবং আরো কিছু গোষ্ঠি ওলী-আউলিয়াদের অসম্মান করে। তাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়, বক্তৃতা করে। এরা ইসলামের কল্যাণ করছে না, বরং ফেতনা সৃষ্টি করছে। এদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে এবং এই ফেতনা সৃষ্টিকারীদের যারা প্রশ্রয় দেয়, জামায়াত যাদের জোটভুক্ত সেই বিএনপির বিরুদ্ধেও সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এ দেশে ইসলামের কথা বলে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির সময় একযোগে পাঁচশ’ জায়গায় বোমা ফোটানো হয়েছে। বিএনপি জঙ্গি ভাড়া করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। যারা এভাবে ইসলামের গায়ে কালিমা লেপন করছে তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
সমসাময়িক বিশ্ব প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনে শিশুদের ঢিল ছোঁড়ার জবাবে যখন ইসরাইলী বাহিনী পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করে, তাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেয়া হয় না। মায়ানমারে যখন মুসলমানদের জবাই করে হত্যা করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি হয় না। নির্যাতিত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদেরকে আমাদের আশ্রয়ে ভালো রাখার উপায় দেয়া হয় কিন্তু তাদের নিজ দেশে ফেরত নেওয়ায় জোর দেয়া হয় না। মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য জাতিসংঘে সব দেশের নিন্দা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন দেয়া হয়।
ড. হাছান মাহমুদ এ সময় ইসলামের খেদমতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগকে যুগান্তকারী ও অদ্বিতীয় হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তৎকালীন এই রেসকোর্স উদ্যানে ঘোড়দৌড় বন্ধ করেছিলেন কারণ ইসলাম বাজি সমর্থন করে না। উদ্যানের পাশে তাবলীগ জামাতের মসজিদ এবং টঙ্গীতে মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশাল বিশ্ব ইজতেমার জন্য জমিও বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন। তিনি মদ, জুয়া, হাউজি নিষিদ্ধ করেছিলেন, যেগুলো পরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান আবার চালু করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাসহ ইসলামের খেদমতে বহুকাজ বঙ্গবন্ধু করেছেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, আর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে একসাথে ৫৬০টি মসজিদ, ১ লাখ ২০ হাজার মসজিদ ভিত্তিক মক্তব প্রতিষ্ঠা ও প্রতি মক্তব শিক্ষকের ৫ হাজার ২০০ টাকা মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। খালেদা জিয়া, এরশাদ সরকার মূলা ঝুলিয়ে রেখেছিল আর শেখ হাসিনাই দেশে কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়েছেন, পাশ করা শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকুরিও পেয়েছেন, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রায় প্রতিটি আলিয়া মাদ্রাসার নতুন ভবন এবং ৬ হাজার ১০০ মসজিদে পাঠাগার হয়েছে। ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট হয়েছে। ২০২৪ সালে জাহাজে করে হজ্জ্বযাত্রী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ জাহাজে খরচ বিমানের প্রায় অর্ধেক। মক্কা-মদীনার ইমামবৃন্দ শেখ হাসিনার আমলেই এ দেশে আমন্ত্রণে এসেছেন। সৌদি আরবসহ মুসলিম বিশ্বের সাথে আমাদের সম্পর্ক অনেক উচ্চতায় আসীন হয়েছে।
আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বক্তব্য রাখেন।