কুষ্টিয়ায় শুরুতে ১৪০ শতাংশ জমিতে আখের চাষ করেন বাবুল চৌকিদার। তারপর সেই আখ থেকে মেশিনের মাধ্যমে রস সংগ্রহ করেন। পরে সেই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করেন চিনিমুক্ত আখের গুড়। এমনই চিত্র চোখে পড়ে শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার চর-কোড়ালতলী গ্রামে তার বাড়িতে।
বাবুল চৌকিদার প্রতি বছর খাঁটি এবং নির্ভেজাল আখের রস থেকে ৫০ মণ গুড় তৈরি করেন। দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী তাকে গুড় তৈরির কাজে সহযোগিতা করেন। তিনি বাড়িতে বসেই গুড় বিক্রি করেন। এতে প্রতি বছর যে টাকা উপার্জন করেন, তাতে সংসার অনায়াসে চলে যায়।
সরেজমিনে জানা যায়, ইঞ্জিনচালিত মেশিন দিয়ে আখ ভাঙিয়ে রস তৈরি করছেন বাবুল চৌকিদার। প্রতি বছরই আখের গুড় তৈরি করেন। গুড় বিক্রি করতে তাকে যেতে হয় না বাজারে। খুঁজতে হয় না কোনো পাইকার।
প্রতি বছর ৭০ কড়া জমিতে আখ চাষ করতে খরচ হয় মোট ৮০ হাজার টাকা। আখ থেকে রস সংগ্রহ করে চুলায় জ্বাল দিয়েই গুড় তৈরি করেন। ১৬ কেজি রস একসঙ্গে কড়াইতে জ্বাল দেন। তাতে ১৬ কেজি রস থেকে আখের গুড় পান ৩ কেজি। আখের রস জ্বাল দিতে লাকড়ির প্রয়োজন হয় না। আখের চিড়া দিয়েই আগুনে পুড়ে রস জ্বাল দেন। প্রতি বছর প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় করেন।
কোনো রকম চিনি ছাড়া রসের গুড় তৈরি করা বর্তমানে চ্যালেঞ্জও বটে। সখিপুর থেকে গুড় কিনতে আসা শাকিল সরদার বলেন, ‘আমি প্রতিনিয়ত এ পথ দিয়ে যাতায়াত করি। একদিন দেখলাম রাস্তার পাশেই আখের রস জ্বাল দিচ্ছেন। পরে দেখলাম আখের গুড় তৈরি করছেন বাবুল ভাই। আমি তার কাছ থেকে ৫ কেজি গুড় কিনলাম।
প্রতি কেজি ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। বাজারের গুড় তো ১শ টাকার উপরে। তাই ২০০ টাকা হলেও বাজারের থেকে হাজার গুণ ভালো।’
নড়িয়া থেকে গুড় কিনতে আসা কবিরুজ্জামান কবির বলেন, এখন এরকম বিশুদ্ধ আখের গুড় একেবারেই পাওয়া যায় না। আমি সেদিন একটি ফেসবুক লাইভ দেখি। পরে গুড় কিনে নিলাম। আমার পরিবারের জন্য গুড় কিনে নিলাম। তারা এ গুড় খুব পছন্দ করেন।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা ইসলাম বলেন, ‘দিন দিন প্রকৃত আখের গুড় হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর বাবুল চৌকিদারের পক্ষে ৪-৫ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। তার এ উদ্যোগ আরও অনেকের মাঝেই প্রতিফলিত হবে।