বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান বলেছেন, আজ আমাদের অত্যন্ত খুশির দিন। স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিন। তৃতীয় টার্মিনালের এ প্রকল্প শেষ করতে অনেক প্রতিবন্ধকতা, প্রতিকূলতা ও বৈরী পরিবেশ মোকাবিলা করতে হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও আমাদের প্রকল্পের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
আজ শনিবার (৭ অক্টোবর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশের বিনির্মাণের যে রূপকল্প, তারই অবিচ্ছেদ্য অংশ বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন অধ্যায়। প্রকল্পের দায়িত্ব প্রদানের সময় প্রধানমন্ত্রীর তিনটি নির্দেশনা ছিল। ১. যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা। ২. প্রকল্পের কাজের গুণগত মান বজায় রাখা এবং ৩. নির্ধারিত ব্যয়সীমার মধ্যে প্রকল্প শেষ করা। আমি অত্যন্ত গর্বের সাথে জানাচ্ছি, সবগুলো নির্দেশনা মেনেই এ প্রকল্প আমরা শেষ করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) করা হয়েছে। দুই লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের মডার্ন টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের ভেতরে থাকবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া। এতে রয়েছে বেশ কয়েকটি স্ট্রেইট এস্কেলেটর।
নতুন এ টার্মিনালে যাত্রীদের ব্যাগের জন্য সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি ও ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরের মতো অত্যাধুনিক তিনটি আলাদা স্টোরেজ এরিয়া করা হয়েছে। রেগুলার ব্যাগেজ স্টোরেজ, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড এবং অড সাইজ (অতিরিক্ত ওজনের) ব্যাগেজ স্টোরেজ। যাত্রীদের স্বাভাবিক ওজনের ব্যাগেজের ১৬টি রেগুলার ব্যাগেজ বেল্ট থাকবে টার্মিনালটিতে। অতিরিক্ত ওজনের (অড সাইজ) ব্যাগেজের জন্য স্থাপন করা হয়েছে আরও চারটি পৃথক বেল্ট।
অত্যাধুনিক এ টার্মিনাল ভবনে থাকবে ১০টি সেলফ চেক-ইন কিওস্ক (মেশিন)। এগুলোতে নিজের পাসপোর্ট এবং টিকিটের তথ্য প্রবেশ করালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে বোর্ডিং পাস ও সিট নম্বর। এরপর নির্ধারিত জায়গায় যাত্রী তার লাগেজ রেখে দেবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাগেজগুলো এয়ারক্রাফটের নির্ধারিত স্থানে চলে যাবে। তবে নির্ধারিত ৩০ কেজির বেশি ওজনের ব্যাগেজ নিয়ে এখানে চেক-ইন করা যাবে না। সেসব যাত্রীদের জন্য আরও ১০০টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে এ টার্মিনালে।
টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করছে স্যামসাং গ্রুপের কনস্ট্রাকশন ইউনিট স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং (সিঅ্যান্ডটি) কর্পোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির নির্মিত স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে বুর্জ খলিফা, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, তাইপে ১০১, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল, দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আবুধাবির ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক। এছাড়াও টার্মিনালের ভেতরের ভবনটির নকশা তৈরি করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৩, চীনের গুয়াঞ্জুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের নকশা তৈরি করেন।