স্বপ্না আক্তার নামে এক নারীকে ১০০০ পিচ ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে উল্টো ফেঁসে যাচ্ছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা। স্বপ্না আক্তারকে মিথ্যাভাবে ফাসিয়ে, অবৈধভাবে আটক করে এবং মিথ্যা অভিযোগে মামলা করায় অধিদপ্তরের গুলশান সার্কেলের উপ-পরিদর্শক শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে আগামি সাত দিনের (ক্যালেন্ডার দিবস) মধ্যে মামলা করে আদালতকে অবগত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর উত্তরের প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, রোববার (৮ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন। এছাড়া আদালত স্বপ্না আক্তারকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। তিনি আরও জানান, স্বপ্না আক্তারকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা তদন্ত কর্মকর্তা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আহসানুর রহমানকে মামলাটি দায়েরের নির্দেশ দিয়ে সিআইডিকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
স্বপ্নার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিদর্শক রোকেয়া আক্তার, সহকারী উপপরিদর্শক মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান ও রুবেল হোসেন, সিপাহী শরিফুল ইসলামসহ তিনজন পুলিশ ফোর্সের সমন্বয়ে গঠিত রেইডিং টিমের সহযোগিতায় সন্ধ্যা সাতটার দিকে স্বপ্না আক্তারের খিলক্ষেতের বাসায় তল্লাশি চালায়। মামলার বাদী সাজ্জাদ হোসেন উপ-পরিদর্শক রোকেয়া আক্তারেরর মাধ্যমে আসামির দেহ ও শয়ন কক্ষ তল্লাশি করে পাঁটটি স্লিপারযুক্ত পলিপ্যাকেটে রক্ষিত অ্যামফিটামিন যুক্ত মোট ১০০০ পিচ ইয়াবা উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থলে জব্দ তালিকা প্রস্তুত করেন ও সাক্ষীদের স্বাক্ষর গ্রহণ করেন। এরপর মামলার তদন্তভার পড়ে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আহসানুর রহমানেরর ওপর। তিনি সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। সাক্ষীরা জবানবন্দিতে ঘটনার কিছুই জানেন না বলে লিখিত ভাবে জানান। তাই
তদন্ত কর্মকর্তা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আহসানুর রহমান স্বপ্না আক্তারকে অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।
এদিকে সার্বিক দিক বিবেচনায় আদালতের পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত সাড়ে ৮ টার মধ্যে ৫ জন অধিদপ্তরের স্টাফ ও দুই জন পুলিশ ফোর্স নিয়ে অভিযান পরিচালিত হয়নি। কথিত ঘটনাস্থল ভুল, উপ পরিদর্শক রোকেয়া আক্তারের মাধ্যমে মহিলা আসামি স্বপ্না আক্তারের দেহ ও তার কক্ষ তল্লাশি হয়নি এবং টিমে কোন মহিলা সদস্য ছিল না। ওই সময়ে স্বপ্না পার্শ্ববর্তী বাসায় টিউশনি করাচ্ছিলো। সঙ্গীয় ফোর্স, জব্দ তালিকার সাক্ষী বা প্রত্যক্ষদর্শী অন্য কোনো সাক্ষীর উপস্থিতিতে আসামির দেহ হতে বা ওয়ারড্রপের ভিতর থেকে কোনো ইয়াবা উদ্ধার হয় নাই। কথিত জব্দ তালিকার সাক্ষীদের সামনে ইয়াবা গণনা বা ওজন করা হয় নাই এবং ঘটনাস্থলে সম্পূর্ণরূপে জব্দ তালিকা প্রস্তুত করা হয় নাই। তাই আসামি স্বপ্না আক্তারের কাছ থেকে কোনো ইয়াবা উদ্ধার হয় নাই ও স্বপ্না আক্তার ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত নয়। উল্লেখ্য প্রদত্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করা হলো এবং আসামীকে অত্র মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।