নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য খুব বড় ছিল না, ২৪৬ রানের। শুরুর দিকে আশার আলো দেখিয়েছিলেন টাইগার বোলাররা। তবে সেই আশা মিইয়ে দেন ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন আর মারকুটে ড্যারেল মিচেল।
এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে এসে দ্বিতীয় হারের মুখ দেখলো বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেট আর ৪৩ বল হাতে রেখে হেসেখেলে হারালো সাকিব আল হাসানের দলকে। এটি কিউইদের টানা তৃতীয় জয়।
উইলিয়ামসন অবশ্য ৭৮ রান করে উঠে যান ড্রেসিংরুমে। তারপরও বাংলাদেশ আর উইকেট ফেলতে পারেনি। ড্যারেল মিচেল ৬৭ বলে ৬ চার আর ৪ ছক্কায় ৮৯ রানে অপরাজিত থেকে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন।
অথচ নিউজিল্যান্ড ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই আঘাত হেনেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টারের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রাচিন রাবিন্দ্র (১৩ বলে ৯)। ১২ রানে প্রথম উইকেট হারায় কিউইরা।
কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে ডেভন কনওয়ে আর কেন উইলিয়ামসন মিলে গড়ে ফেলেন ৮০ রানের একটি জুটি। অবশেষে এই জুটিটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান।
কনওয়েকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন টাইগার অধিনায়ক। ৪৫ রানে সাজঘরে ফেরেন কিউই ওপেনার। কিন্তু উইলিয়ামসনকে থামাতেই বেগ পেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তিনি উঠে যাওয়ার পর দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন ড্যারেল মিচেল।
এর আগে তিন সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে চড়ে কিউইদের বিপক্ষে সম্মানজনক পুঁজি পায় বাংলাদেশ, ৯ উইকেটে তোলে ২৪৫ রান।
চেন্নাইয়ে টস জিতে প্রথমে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। বরাবরের মতো শুরুতেই ধাক্কা। ট্রেন্ট বোল্টের বলে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন। আগের ম্যাচে হাফসেঞ্চুরির পর এবার গোল্ডেন ডাকে (১ বলে ০) সাজঘরে টাইগার ওপেনার।
তরুণ তানজিদ হাসান তামিমও বড় মঞ্চে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারছেন না। আজ সেট হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি। লুকি ফার্গুসনের বলে স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তামিম (১৭ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ১৬)।
মেহেদী হাসান মিরাজ তিন নম্বরে নেমে বেশ রানের গতি সচল করেছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ৩০ রানে তিনিও ভুল করে বসেন। ফার্গুসনকে পুল করতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। ৪৬ বলের ইনিংসে তিনি হাঁকান ৪টি বাউন্ডারি।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হয়েছেন সহজ এক বলে। গ্লেন ফিলিপস নিজেও হয়তো আশা করেননি এমন বলে উইকেট পেয়ে যাবেন। আলতো করে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে পথে হাঁটেন শান্ত (৮ বলে ৭)।
১৩ ওভার না যেতেই ৫৬ রানেই নেই ৪ উইকেট। সেই ব্যাটিং বিপর্যয়, সেই পুরোনো চেহারায় বাংলাদেশ। দলের এই বিপর্যয়ের মুখে হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিম। ২১ ওভারে দলীয় সংগ্রহ ১০০ ছোঁয় টাইগাররা।
মুশফিক-সাকিবের জুটিতে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ। তবে পঞ্চম উইকেটে ১০৮ বলে তাদের ৯৬ রানের জুটিটি অবশেষে ভেঙে দেন লুকি ফার্গুসন।
৩০তম ওভারের চতুর্থ ফার্গুসনকে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন সাকিব। পরের বলে আবার চড়াও হতে দিয়ে ভুল করে বসেন টাইগার অধিনায়ক। বাউন্সারে পরাস্ত হয়ে তুলে বল তুলে দেন আকাশে। ৫১ বলে সাকিবের ৪০ রানের ইনিংসে ছিল ৩টি চার আর ২টি ছক্কার মার।
মুশফিক দারুণ খেলছিলেন। দলের বিপদে আরও একবার জ্বলে উঠেছিল মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিমের ব্যাট। দেখেশুনে খেলেন তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮তম হাফসেঞ্চুরি।
আশা জেগেছিল সেঞ্চুরির। কিন্তু মুশফিক পারলেন না। ম্যাট হেনরির স্লোয়ার ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হলেন টাইগার উইকেটরক্ষক। তার ৭৫ বলে ৬৬ রানের ইনিংসটি ছিল ৬ চার আর ২ ছক্কায় সাজানো।
এরপর তাওহিদ হৃদয়ও সাজঘরে ফিরে গেছেন ২৫ বলে ১৩ রান করে। ট্রেন্ট বোল্টের নাকল বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে শর্ট এক্সট্রা কভারে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
৪ উইকেটে ১৫২ থেকে ১৮০ তুলতে ৭ উইকেট হারিয়ে ফের চাপে পড়ে বাংলাদেশ। অষ্টম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর তাসকিন আহমেদ মিলে ৪৩ বলে যোগ করেন মূল্যবান ৩৪ রান। ১৯ বলে ২ ছক্কায় তাসকিনের ১৭ করে আউট হলে ভাঙে এই জুটি।
তবে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ বাকি সময় বলতে গেলে একাই টেনে নিয়ে গেছেন দলকে। ৪৯ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের লুকি ফার্গুসন ৩টি আর ট্রেন্ট বোল্ট ও ম্যাট হেনরি নেন ২টি করে উইকেট।