গতকাল শনিবারের (২৮ অক্টোবর) সহিংসতার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সহিংসতার ঘটনায় অনেকগুলো মামলা হতে পারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মামলা শুরু হয়েছে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারাই মামলা দেবে। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে আইডেন্টিফাই করে মামলা দেবো।
তিনি আরও বলেন, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে যারা যারা ঢুকেছেন, যারা সেখানে হামলা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। যারা গাড়ি পুড়িয়েছে, তাদের নামে মামলা হবে। পুলিশকে পিটিয়ে যারা হত্যা করেছে, যারা পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে হামলা করেছে, তাদের নামে মামলা হবে। সাংবাদিকরা যারা আহত হয়েছে, তাদেরও উচিত মামলা করা।
‘২০১৪ সালের মতো তারা একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। আমরা অবশ্যই তা থামাবো,’ – তিনি বলেন।
তবে কতগুলো মামলা হয়েছে বা কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি তিনি।
বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ সহিংসতা যখন হচ্ছিল তখন সিনিয়র নেতারা মিটিং করছিলেন। তাদের ডিএমপি কমিশনার বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন তাদের মহাসমাবেশের সীমানা কতো দূর হবে, তারা জানিয়েছিল নাইটেঙ্গেল মোড় পর্যন্ত। কিন্তু তারপরও যে সহিংসতা হয়েছে সেটির দায় কি বিএনপি নেতারা এড়াতে পারবেন?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে। পুলিশ হাসপাতালের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে। এভাবে এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যাতে সেবিকা ও হাসপাতালকর্মীরা আহত হয়েছেন। এখন গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনী যেভাবে হামলা চালাচ্ছে, বিএনপির বর্বরোচিত হামলা সেই ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয়।
বিএনপির উগ্র কর্মীদের আক্রমণ থেকে হাসপাতালও রেহাই পায়নি মন্তব্য করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, বিএনপি প্রচার চালিয়েছিল তাদের সমাবেশে দশ লাখ লোক নিয়ে আসবে। আমাদের পুলিশ কমিশনার বলেছিলেন, এমনিতেই ঢাকা শহরে যানজট, তারপর দশ লাখ লোক নিয়ে আসবেন, আপনারা কোথায় কী করতে চান, মাঠে যান। তারা মাঠে না গিয়ে নিজেদের দলীয় অফিসের সামনে সমাবেশ করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের পুলিশ কমিশনার তাদের কাছে কয়েকটি প্রশ্ন রেখেছিলেন, কেবল তাদেরই নয়, আমাদের আওয়ামী লীগের সমাবেশ নিয়েও প্রশ্ন করেছিলেন। সেগুলো হচ্ছে, আপনারা কতক্ষণ সমাবেশ করবেন, কোন জায়গা থেকে কোন জায়গা পর্যন্ত আপনাদের সমর্থকরা অবস্থান করবেন? আপনারা কোনো ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারবেন না। পুলিশ কমিশনার এমন অনেকগুলো নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, তারা জানিয়েছিলেন, একদিকে নাইটিঙ্গেল মোড় অন্যদিকে ফকিরাপুলের মোড় পর্যন্ত তারা থাকবেন। কোনো সহিংসতা না করারও অঙ্গীকার করেছিলেন। আমরা অনেক দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, পাশাপাশি আমাদের আওয়ামী লীগও একটা শান্তির সমাবেশ ডেকেছিল। সেটাতেও অনেক মানুষ এসেছিল, সঙ্গত কারণে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে দিয়েও দুয়েকটা ছোট ছোট দল যাচ্ছিল। বিশেষ করে টেম্পু ও লেগুনা নিয়ে নারীদের একটি গ্রুপ যাচ্ছিল। তখন হঠাৎ করে লেগুনায় আক্রমণ করে নারীদের মারধর করা হয়েছে। পুলিশ তখন তাদের বাধা দেয়। এরপর বিএনপির নেতাকর্মীরা মারমুখী হয়ে যান। তারা পুলিশের ওপর চড়াও হন। এরপর তারা যেখান দিয়ে গেছে, সেখানেই ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নাইটিঙ্গেলের পরে কিন্তু পুলিশ আর ঢোকেনি। পরবর্তীতে আমরা দেখলাম, বিএনপি নেতাকর্মীরা পকেটে করে নিয়ে আসা ইটপাটকেল ও গুলতি দিয়ে মারবেল ছুড়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়, যা আমাদের কাছে ভিডিও করা আছে।
সংবাদকর্মীরা ও পুলিশ আহত হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখলাম, তাদের ইটপাটকেলে এক পুলিশ সদস্য মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর দেখলাম ছাত্রদলের এক নেতা, ক্যামেরায় বন্দি রয়েছেন, এসে পুলিশকে পিটাচ্ছেন। এমনভাবে পিটিয়েছেন, তারপর চাপাতি দিয়ে তার মাথা খণ্ডিত করা হয়েছে। এভাবে নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড আপনারা খুব কম দেখেছেন।