ভোট না পাওয়ার ভয়ে বিএনপি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে বিএনপি না এলেও দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ।তবে নৌকার প্রার্থীর বাইরে দলের অন্যদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্ত করে দিতে পারে বলে জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশন আগামী ১১ এপ্রিল প্রথম ধাপে ২০টি জেলার ৬৩টি উপজেলার ৩২৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইভাবে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন ধাপে সারা দেশের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করবে। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে।
বিএনপির নির্বাচন বর্জনের এই ঘোষণা তাদের দলের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ।
দলটির নেতারা বলছেন সদ্য অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির ব্যাপকভাবে পরাজিত হয়েছে। জনগণ তাদের ভোট দেয়নি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তারা ভালো করতে পারবে না এটা বুঝতে পেরেই নির্বাচন থেকে আগে ভাগে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
এবারের পৌরসভা নির্বাচনে গত বছরের তুলনায় বিএনপি ভোট কম পেয়েছে। মোট ৫ ধাপে অনুষ্ঠিত ২৩০টি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি বিজয়ী হয়েছে মাত্র ১১টিতে। এই পরিস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াতে চাচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন। এদিকে বিএনপি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে না এলেও আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে প্রার্থী দেবে বলে জানা গেছে।
দলটির নেতারা বলছেন দলীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচন না করলেও দলটির স্থানীয় নেতারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। তাই আওয়াী লীগ দলীয় প্রার্থী দিয়েই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। আবার নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রার্থী ছাড়াও দলের অন্যরা প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি নাও করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীতা উন্মুক্ত করে দেওয়া হতে পারে। তবে এ সব বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শেষ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে না এলে তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।
বুধবার (৩ মার্চ) দলের এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছাড় দেওয়া বিষয়ে আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। নীতিনির্ধারণী কোনো সভায়ও এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিএনপি ইউপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দেওয়ার পরও স্থানীয়ভাবে তাদের দল সমর্থিত প্রার্থীদের প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, জনগণকে ভোটে টানতে পারবে না এটা জেনেই ভয়ে বিএনপি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চাচ্ছে। বিএনপি যদি ইউপি নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে দলটি আরও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে। এমনিই তো দেউলিয়া হয়েছেই, আরও হবে। বিএনপির এই সিদ্ধান্ত হবে আরও হটকারি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এটা তাদের জন্য বুমেরাং হবে।
বিএনপি নির্বাচনে না এলে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হওয়া উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে কি না জানতে চাওয়া হলে আব্দুর রহমান বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলেও আমরা দলীয়ভাবেই প্রার্থী মনোনয়ন দেবো। দলের অন্য কেউ প্রার্থী হতে চাইলে পারবে কি না সেটা পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমবলেন, পৌর নির্বাচনে বিএনপি ভালো করতে পারেনি। আসলে তারা জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না, জনগণের প্রতি তারা আস্থা রাখতে পারে না। তাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না। তবে আমি মনে করি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে তাদের নির্বাচনে আসা উচিত।
বিএনপি নির্বাচনে না এলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে কি না জানতে চাওয়া হলে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এ ব্যাপারে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শেষ মুহূর্তে কি হয় দেখে দলীয় ফোরামে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।