ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শাসক গোষ্ঠী হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে ইসরায়েলের হাতে সময় মাত্র দুই থেকে তিন সপ্তাহ রয়েছে বলে আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গাজায় আক্রমণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপে দ্রুত জনমত গড়ে উঠছে। ফলে ইসরায়েলের হাতে সময় বেশি নেই। মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোতে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি ইসরায়েলি হামলা শেষে গাজার ভবিষ্যৎ কী হতে পারে তা নিয়েও পরামর্শ দিয়েছেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে তাদের এই যুদ্ধ হবে দীর্ঘ ও কঠিন। কিন্তু ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধান এহুদ বারাক বলেছেন, সুযোগ কমে আসছে। এটি স্পষ্ট যে গাজায় আক্রমণ নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যে বিভক্তির দিকে এগোচ্ছি আমরা। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে নির্দেশ দিতে পারে না।
ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রধান নিশ্চয়তাদানকারী দেশ হিসেবে ওয়াশিংটনের ভূমিকার কথা ইঙ্গিত করে এহুদ বারাক বলেছেন, কিন্তু আমরা তাদের উপেক্ষা করতে পারব না। আগামী দুই বা তিন সপ্তাহ, হয়ত আরও কম সময়ের মধ্যে আমেরিকার দাবি মতো সমঝোতায় আসতে হবে।
১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা এহুদ বারাক বলেছেন, সম্প্রতি মার্কিন কর্মকর্তাদের বক্তব্যে পরিবর্তন এসেছে। লড়াইয়ে একটি মানবিক বিরতির কথা বলছেন তারা। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর যে সহানুভূতি ইসরায়েলের প্রতি তৈরি হয়েছিল তা এখন হ্রাস পেয়েছে।
বারাক উল্লেখ করেছেন, গাজায় ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্য হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে কয়েক মাস বা বছর লাগতে পারে। কিন্তু গাজায় বেসামরিকদের প্রাণহানির ঘটনায় পশ্চিমা সমর্থন কমে আসছে। এক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে বড় সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও এতে ভূমিকা রেখেছে। পশ্চিমা দেশগুলো হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের নিয়েও উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, জনগণের মনোভাব দেখুন এবং পর্দার আড়ালে এটি আরও স্পষ্ট। ইউরোপে জনসমর্থন হারাচ্ছি আমরা। এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা ইউরোপীয় সরকারগুলোর সমর্থন হারাতে শুরু করব। আরও এক সপ্তাহ পর আমেরিকানদের মধ্যে বিভক্তি প্রকাশ্যে উঠে আসবে।
হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার যে লক্ষ্য নেতানিয়াহু নির্ধারণ করেছেন, সেটির প্রতি নিজের ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মিত্রদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, সামরিক অভিযান পুরোপুরি লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলেও তাদের ব্যাপক ক্ষতি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পরে হামাসের পুনরুজ্জীবন ঠেকাতে হবে।
গাজার রাজনৈতিক অবস্থায় পরিবর্তন আনার জন্য এহুদ বারাকের পরামর্শ হলো, ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শেষে গাজায় নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে বহুদেশীয় আরব বাহিনী। আরব লিগ ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থনে এই বাহিনী গড়ে তোলা যেতে পারে। প্রতীকীভাবে কিছু অনারব দেশও থাকতে পারে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে পুরোপুরি দায়িত্ব সহযোগিতার জন্য তিন থেকে ছয় মাস তাদের মোতায়েন রাখা যেতে পারে।
বহুদেশীয় আরব বাহিনীর হাতে গাজার নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়ার প্রস্তাব অতীতে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। পশ্চিম তীর-ভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বারাককে বলেছিলেন, ইসরায়েলি বেয়োনেটের সহযোগিতায় কখনও গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবেন না তারা।