শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, অনেকে বলছেন নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা থাকবে না, ধর্মশিক্ষাও থাকবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অন্য বিষয়ে মূল্যায়ন যেমন হবে, ধর্মীয় শিক্ষাও সেভাবেই মূল্যায়ন হবে। আমরা শিক্ষার সঙ্গে জীবন এক করে দিতে চাই। ছাত্র-ছাত্রীরা এখন জীবনমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। চার দেয়ালের মধ্যে এখন আর শিক্ষার সীমাবদ্ধ থাকবে না।
বুধবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন অ্যাপ নৈপুণ্যের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মতামত সেশন সঞ্চালনার সময় এ মন্তব্য করেন তিনি।
মন্ত্রী আরো বলেন, একটি মহল গুজব ছড়াচ্ছে নতুন কারিকুলামে ধর্ম শিক্ষাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বাস্তবতা হলো সব বিষয়কে সমানভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
এর আগে মন্ত্রী নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন অ্যাপ নৈপুণ্যের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা ১৭ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন।
দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে করা এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, এ অ্যাপটি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের তথ্য সংগ্রহ করতে প্রস্তুত করা হয়েছে। এ অ্যাপটিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। একইসঙ্গে এ অ্যাপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীদের রিপোর্ট কার্ড প্রস্তুত করবে।
জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালুকৃত মূল্যায়ন পদ্ধতির তথ্য সংরক্ষণ ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিপোর্ট কার্ড প্রস্তুতের জন্য ‘নৈপুণ্য’ নামের অ্যাপটি উন্নয়ন করা হয়েছে। এটুআইয়ের কারিগরি সহায়তায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর দায়িত্বে রয়েছে।
অনুষ্ঠানে এনসিটিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ অ্যাপে শিক্ষকদের তথ্যও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর মাধ্যমেই বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নির্বাচন করবেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। প্রধান শিক্ষকদের মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে অ্যাপে লগইন করা ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড পাঠানো হয়েছে। তা ব্যবহার করে প্রধান শিক্ষকরা অ্যাপে লগইন করতে পারবেন। শিক্ষক ব্যবস্থাপনা অপশন থেকে শিক্ষকদের যুক্ত করা যাবে এবং বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নির্বাচন করা যাবে। কোনো শিক্ষককে যুক্ত করা হলে তার মুঠোফোনের এসএমএসের মাধ্যমে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড চলে যাবে। যা দিয়ে ওই শিক্ষক অ্যাপের ড্যাশবোর্ডে লগইন করতে পারবেন। এতে শিক্ষার্থীদের শিখনকালীন মূল্যায়ন ও সামষ্টিক মূল্যায়নের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে৷ এটি ব্যবহার করেই সক্রিয়ভাবে রিপোর্ট কার্ড প্রস্তুত করতে হবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সুন্দর করে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয় এই অ্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের যে যাত্রা শুরু হয়েছে এটি তার প্রমাণ। শিক্ষার্থীদের ছোটবেলা থেকেই স্মার্ট নাগরিক তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার শুরু হয়েছে- যা অনেকের প্রত্যাশা ছিল। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখন অন্য এক দিগন্তে এগিয়ে যাচ্ছে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বক্তব্যে বলেন, নতুন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে অনেক অপপ্রচার হচ্ছে। নতুন শিক্ষা কারিকুলামে মুখস্তবিদ্যা থেকে বের হতে পারবো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ, সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দ্র মজুমদার, বিশিষ্ট সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম, সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদসহ শিক্ষা প্রশাসনের কর্তারা উপস্থিত ছিলেন।