নির্বাচন যথাসময়ে হবে জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সম্মতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। শিগগিরই তফসিল ঘোষণা করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা হবে।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এসব কথা বলেন সিইসি।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি কথা রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছি। তিনি সব শুনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি আশা করেছেন একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল নির্বাচন হবে। সেখানে তার যে সহযোগিতা করতে হয় তা করবেন। আমরাও বলেছি আপনার সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমরা অবশ্যই সেটা নেব। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে যেকোনো ধরণের সহযোগিতা করতে তিনি সদা প্রস্তুত।
সিইসি বলেন, রাষ্ট্রপতি যেকোনো মূল্য সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা বলেছেন। আমরা তাকে বলেছি আমরাও সাংবিধানিকভাবে যে দায়িত্ব পেয়েছি, সে অনুযায়ী যথাসময়ে ও যথানিয়মে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতিকে আশ্বস্ত করেছি ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ করেছি। জনগণের নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা কামনা করে যাচ্ছি। আশা করি যথাসময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সক্ষম হব।
নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছি নির্বাচন অত্যাসন্ন। আমাদের যে শেষ সময়সীমা ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে হবে, উনিও জানেন। এখনো আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি। এখন আমরা কমিশনে বসে চূড়ান্ত তালিকা ঠিক করে তফসিল ঘোষণা করব এবং সেটা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে।
নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা আগে যেটা বলেছি সেভাবেই আছি। এখন আমরা বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব কবে নির্বাচন। সিদ্ধান্ত হলে আপনাদের (সাংবাদিক) জানিয়ে দেব।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে সংলাপের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, না এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আমরা আশা করি সবাই সহযোগিতা করবেন।
এর আগে দুপুরে পৌনে ১২টার পর বঙ্গভবনে যান সিইসি ও চার কমিশনার।
রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচনের প্রস্তুতির সর্বশেষ অবস্থা জানায় নির্বাচন কমিশন। সেই ধারাবাহিকতায় দুপুরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর সভার আয়োজন করবে কমিশন। ওই সভায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করা হতে পারে। একইসঙ্গে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্ধারণ করা হতে পারে।
এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে সিইসি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারেন।
সংবিধান অনুযায়ী সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বর্তমান সংসদের মেয়াদ ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি শেষ হবে। এক্ষেত্রে ৯০ দিনের গণনা শুরু হবে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর থেকে। নভেম্বরের মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও জানুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩। মোট ভোটারের মধ্যে নারী ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২, পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৫২ জন।
সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তরুণদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়ায় ভোটার সংখ্যা বেড়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার ১৯৩ জন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করেছে ইসি। এ তালিকা অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে।ইসি জানায়, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা দীর্ঘদিনের রীতি রয়েছে। এরপরই তফসিল ঘোষণা হবে। ১৪ অথবা ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় ইসি। ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। এরই মধ্যে ১ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইসি।