দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমাদান শেষ। এবার ভোটের হিসাব-নিকাশ শুরু। বিএনপিসহ ১৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতি দলের বর্জন করা এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে রেকর্ডসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থক। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে দলীয় প্রধানের ইঙ্গিত পেয়ে নৌকা প্রতীককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন নিজ দলের মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীরা। অধিকাংশ আসনে নৌকার প্রতীকের বিপক্ষে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী লড়াই করছেন। ফলে অধিকাংশ আসনেই নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ থেকে আসা স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন।বিএনপি বর্জন করায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে ক্ষমতাসীনদের নামনে. নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্রের মিছিলে আওয়ামী লীগ নেতারা. বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের বর্জনের ঘোষণার মধ্যে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হলে বাধা দেওয়া হবে না-এমন ইঙ্গিত আসার পর অন্যান্য জেলার মতই নোয়াখালীতে জেলায় নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
মনোনয়নপত্র জমাদান শেষে নির্বাচন কমিশন সূত্র ও নোয়াখালী ৬ আসনের তথ্য অনুসারে,নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ও জেলার স্ব স্ব উপজেলায় উপজেলা রিটানিং অফিসারের দপ্তরে এ সকল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়। সংসদীয় ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বিকল্প ধারা, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, গণফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সহ ৫৫ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ইসি সূত্র জানায়, নোয়াখালীর ৬ আসনে ৫৫ মনোনয়নপত্র জমা
নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ি আংশিক) এ আসনে মোট প্রার্থী ১১জন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এইচ এম ইব্রাহিম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ২জন। এছাড়া জাসদ, গণফ্রন্ট, তরিকত ফেডারেশন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস এছাড়া স্বতন্ত্র ১ জনসহ ১১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নোয়াখালী -২ (সেনবাগ- সোনাইমুড়ি আংশিক) এ আসনে মোট প্রার্থী ১৩ জন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোরশেদ আলম। এ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৪জন ছাড়াও জাতীয় পার্টি, জাসদ, বিএনএফ, কল্যান পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট, জাকের পার্টি সহ স্বতন্ত্র ২ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নোয়াখালী- ৩ (বেগমগঞ্জ) আসনে মোট প্রার্থী ১১জন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মামুনুর রশিদ কিরন। এ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৩ জন। জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, জাকের পার্টি, জাসদ, সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট ও ২জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনে ৯জন মনোনয়নপপত্র জমা দিয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী একরামুল করিম চৌধুরী। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এক জন। এ আসনে বিকল্পধারার প্রার্থী আবদুল মান্নান মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি, জাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট ও সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নোয়াখালী-৫ (কোম্পানিগঞ্জ-কবিরহাট) এ আসনে মোট প্রার্থী ৫জন। এ আসনে আওয়ামী লীগের পার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পক্ষে বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়। তবে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী বা স্বতন্ত্র পার্থী নেই। এছাড়া জাতীয় পার্টি, জাসদ, ইসলামিক ফ্রন্ট ও সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন।
নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে মোট প্রার্থী ৬ জন। এ আসনে আওয়ামী লীর্গে মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আয়শা ফেরদৌস এমপিও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ও এনপিপির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
গত ২৬ নভেম্বর গণভবনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী সবার সঙ্গে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সভায় তিনি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার কথা বলেন বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্যমতে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগ না করতেও নৌকার প্রার্থীদের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। এরপরই অধিকাংশ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলো- আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি-জেপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ কংগ্রেস, তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ছিল এবং নোয়াখালী জেলায় ৬টি সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত ৬ প্রার্থী ছাড়াও জাতীয় পাটি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
দলীয় মনোনয়নপত্র ছিল পরে প্রতীক বরাদ্দের সময় চূড়ান্তভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সময় ১৯ থেকে বাড়িয়ে ২৮ নভেম্বর করা হয়।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে ৬ টি আসনে ১৬টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে মোট ৫৫টি মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়েছে।