দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালে সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ অনুমোদন দেন তিনি। তবে কবে থেকে সেনা মোতায়েন হবে তা আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসি।
এর আগে বেলা ১১টার কিছুসময় আগে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সাথে ইসির বৈঠক শুরু হয়। এসময় সিইসি’র সঙ্গে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর অংশগ্রহণ করেন।
ইসি সচিব বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি আরও বলেন, বেলা ১১টায় সিইসি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এর বিষয়বস্তু ছিল ভোটে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার লক্ষ্যে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সহায়তাগ্রহণ সম্পর্কিত অনুরোধ। সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সিইসি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতির কাছে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য অনুরোধ করেছেন। রাষ্ট্রপতি বিষয়টি শুনেছেন, আশ্বাস দিয়েছেন যে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগির সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন।
সময়সীমা ১৩ দিনই বহাল থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময় কখন কীভাবে নিয়োজিত হবে, তাদের টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন কী হবে সেটা সশস্ত্র বাহিনীর বিভাগে সঙ্গে ইসি পত্রালাপাপের মাধ্যমে চূড়ান্ত করবে।
তিনি আরও বলেন, একটা আলোচনা হয়েছিল অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে নিয়োজিত থাকবে তার সঙ্গে সমন্বয় করে যাতে তারা দায়িত্ব পালন করতে পারে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট সময়টি পরে জানানো হবে। ১৩ দিন চূড়ান্ত না। আমরা আলোচনা করে ঠিক করে নেবো।
এরইমধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি অনুমতি দিলে আগামী ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ দিনের জন্য তারা ভোটের দায়িত্ব পালন করবেন।
সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিনের আগে-পরে মিলিয়ে ১০ দিন সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখা হয়।
বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’বিধানের অধীনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি নির্বাচনী এলাকাগুলোতে দায়িত্ব পালন করে সেনাবাহিনী।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনা সদস্যদের ভোটের দায়িত্বে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেয় নির্বাচন কমিশন। ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ ঘিরে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনা মোতায়েনের প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ১১ ডিসেম্বর সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইসি সচিব জাহাংগীর আলম।
সেদিন তিনি বলেছিলেন, নীতিগতভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সশস্ত্র বাহিনীকে নির্বাচনি কাজে দায়িত্ব দিলে কমিশন যেভাবে চাইবে সেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। রাষ্ট্রপতি যদি সদয় সম্মতি দেন তাহলে পরবর্তীতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে মো. সাহাবুদ্দিন ভোটে সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেন।
তফসিল অনুযায়ী, আজ ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়। চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। প্রতীক নিয়েই প্রার্থীরা ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালাতে পারবনে। আর ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।