প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দেয়ায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুসসহ দলের চারজনের নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন করেছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনটি জমা দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে এ আবেদন দেয়া হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল আবেদন পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আবেদন পেয়েছি। এটার এখন পরবর্তী বিষয়গুলো দেখা হবে।’ এর বেশি তিনি কথা বলতে চাননি।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুসাব্বিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলার এই আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, মামলার আবেদন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দেয়া হয়েছে। তিনি অনুমোদন দিলে মামলার পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হবে।
অ্যাডভোকেট মুসাব্বিরুল ইসলাম রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুসহ আরও যাদের আসামি করার আবেদন করেছেন তারা হলেন- বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাবেক সিটি মেয়র ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন।
আবেদনে বলা হয়, গত ২ মার্চ বিএনপি রাজশাহীতে বিভাগীয় সমাবেশ করে। মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনের সঞ্চালনায় সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিএনপির এই চার নেতা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতের অসৎ উদ্দেশ্যে নেতাকর্মী, সাংবাদিক, আইনশৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতিতে মিজানুর রহমান মিনু প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘হাসিনা রেডি হও, আজ সন্ধ্যার সময়, কালকে সকাল তোমার নাও হতে পারে, মনে নাই পঁচাত্তর সাল? পচাত্তর সাল মনে নাই?’
মামলার আবেদনে আরও বলা হয়, মিনুর এই ঘোষণার পর বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উগ্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। কিছু নেতাকর্মী সমাবেশের এই বক্তব্য ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার করেন। সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদুস তালুকদার দুলুসহ অন্যরাও একইভাবে বক্তব্য দিয়ে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করেন এবং বেআইনিভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকার উৎখাতের হুমকি দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাসহ নির্বাচিত সরকার উত্থাতের প্রকাশ্য ঘোষণা ও হুমকি দিয়ে তারা রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধ করেছেন। যা বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি বিপদজনক ও হুমকিস্বরূপ।
উল্লেখ্য, সমাবেশে আরেকটি আগস্ট ঘটানোর ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দেয়ায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করে মহানগর আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। মিনুকে জাতির সামনে ক্ষমা চাইতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া আওয়ামী লীগ। নইলে মামলা করারও ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। আর ওয়ার্কার্স পার্টি মিনুকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। আল্টিমেটামের ৭২ ঘণ্টা পর মিনু গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়ে ক্ষমা না চাইলেও নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে ক্ষমা না চাওয়ায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মামলার আবেদন করা হলো।