ফিলিস্তিনের গাজায় ‘গণহত্যার অপরাধে’ ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলার শুনানি আজ। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) থেকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে শুরু হচ্ছে মামলার গণশুনানি।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে শুনানির তারিখ ঘোষণা করেন আইসিজে। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) শুনানি শেষ হবে।
সর্বশেষ এই মামলায় সমর্থন জানালো ব্রাজিল। বুধবার (১০ জানুয়ারি) ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এক বৈঠককালে দেশটির প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা সমর্থন জানান। এর মধ্য দিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ১৩টি দেশ গাজা গণহত্যা মামলায় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি সমর্থন জানালো। এর আগে মালয়েশিয়া, তুরস্ক, বলিভিয়া, নিকারাগুয়া, মালদ্বীপ, ভেনিজুয়েলা, নামিবিয়া, জর্ডান, মরক্কো, ইরান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও সৌদি আরব এই মামলায় সমর্থন জানিয়েছে।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘনের আলোকে প্রেসিডেন্ট গণহত্যার পর্যায়ে পড়তে পারে এমন সব কর্মকাণ্ড ও পদক্ষেপ বা জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশনের শর্তাধীন অপরাধ অবিলম্বে বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে আহ্বান জানানোর জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্যোগের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।’
এদিকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে থেকে শুরু হচ্ছে মামলার গণশুনানি। যারএই দুদিন আদালত উভয় পক্ষের যুক্তি শুনবে এবং এরপরে ইসরাইলের গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করার অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করবে কি না তা সিদ্ধান্ত নেবে। গাজায় ‘গণহত্যার অপরাধে’ গত মাসের শেষ দিকে (২৯ ডিসেম্বর) এই মামলা দায়ের করে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে জাতিসংঘের আদালতে মামলাটি প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইল।
মামলা নিয়ে বিশ্লেষকরা যা বলছেন:
দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিভাগের মুখপাত্র ক্লেসন মনিয়েল্লা বলেছেন, ‘গাজায় চলমান গণহত্যার প্রেক্ষাপটে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে ১৯৪৮ সালের ‘গণহত্যা প্রতিরোধ ও শান্তি সংক্রান্ত কনভেশনের’-আওতায় যে কার্যক্রমগুলোকে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে সেগুলোও গাজায় সংঘটিত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।’
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরাইলকে গণহত্যার জন্য দায়ী প্রমাণ করতে পুরো মামলাটির কার্যক্রম কয়েক বছর চলতে পারে, তবে এই সপ্তাহের শুনানিটি হচ্ছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জরুরি একটি পদক্ষেপ।
ব্রিস্টলের ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অফ ইংল্যান্ডের দক্ষিণ আফ্রিকার আইনের অধ্যাপক গেরহার্ড কেম্প বলেছেন, ফিলিস্তিনি ইস্যুর প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার সমর্থন দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার একটি ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার শাসক দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সাথে ফিলিস্তিনি জনগণের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক আছে। তাই ইসরাইলকে আইসিজে’র সামনে আনার ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্ব দেয়ার ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে।’