গাইবান্ধা প্রতিনিধি : খাল-বিলে অবহেলায় পড়ে থাকা জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা । এই কচুরিপানা দিয়েই তৈরি করা হচ্ছে ফুলের টব, ব্যাগ, বালতিসহ নানা সৌখিন সামগ্রী। এসব সামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। সুভাষ চন্দ্র বর্মণ নামে এক যুবকের অভিনব এ উদ্যোগের খবর ছড়িয়ে পড়েছ পুরো জেলায়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সুভাষ চন্দ্র বর্মণের বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার মদনের পাড়া গ্রামে। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ শিখে ২০১৬ সালে নিজের গ্রামে গড়ে তুলেন কুটিরশিল্প প্রতিষ্ঠান। বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করা শুকনো কচুরিপানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ফুলের টব, ব্যাগসহ নানা ধরণের সামগ্রী। প্রথমে ছোট পরিসরে শুরু করলেও এখন চারটি এলাকায় কর্মসংস্থান হয়েছে আড়াই শতাধিক নারী ও কিশোরীর। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী কাজ করে উপার্জন করছেন।শিল্পী আক্তার নামে সদর উপজেলার এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কচুরিপানা দিয়ে তৈরি এত সুন্দর ফুলদানি তৈরি সম্ভব এটা আগে বিশ্বাস করতাম না । এখন পাশে গ্রামেই তৈরি করা হচ্ছে কচুরিপানা দিয়ে তৈরি উপকরণ। পাঠানো হচ্ছে বিদেশে এটা আসলেই অবাক করার মতো।’পাশের ফুলছড়ি উপজেলার শিক্ষার্থী আসমা খাতুন বলেন, ‘কচুরিপানা দিয়ে বিভিন্ন খেলনা উপকরণ তৈরি করে এই গ্রামের অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন।’
গাইবান্ধা জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিক্ত প্রসাদ বলেন, ‘কচুরিপানা শিল্পের উদ্যোক্তা সুভাষ চন্দ্র বর্মণ গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। সমাজের মানুষদের দেখিয়ে দিয়েছেন পরিত্যক্ত বা অবহেলিত জলে ভাসা কচুরিপানা মানুষের কর্মসংস্থানের পথ হতে পারে। সরকারিভাবে তাকে সাপোর্ট দিলে হয় এই শিল্প সারাদেশে ছড়ি পরবে।’গাইবান্ধার স্থানীয় কৃষিপণ্য নিয়ে কাজ করা নাবিক বাংলাদেশ নামের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কচুরিপানা দিয়ে তৈরি করা শিল্প বিদেশে রপ্তানি করার এমন উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয় । উদ্যোক্তা সুভাষ চন্দ্র বর্মণের এই প্রচেষ্টা সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে অবহেলিত জলাশয় গুলোতে কচুরিপানা চাষ করা যেতে পরে।’এ বিষয়ে কচুরিপানা শিল্পের উদ্যোক্তা সুভাষ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘এটি বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করার বড় একটা খাত হতে পারে। সরকারের সাহায্য পেলে লোকবল বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারব। দেশীয় বাজারে এসব পণ্যের চাহিদা কম থাকলেও রপ্তানি হয় ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নেদারল্যান্ডসসহ কয়েকটি দেশে।’
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল মতিন বলেন, ‘এটা অনেক বড় একটি কাজ। গ্রামের মেয়েরা কাজ করার জন্য বড় ধরনের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে সে। বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা সহায়তার ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করবো।’