1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৬ অপরাহ্ন

রাজধানীর আড়তে আসতে পথে পথে চাঁদাবাজি, প্রভাব পড়ছে পণ্যমূল্যে

এম রাসেল সরকার
  • আপডেট : সোমবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২৪

এম রাসেল সরকারঃ

রাজধানীর আড়তে আসতে ট্রাক ভাড়া দেড় টাকা পড়েছে। বস্তা কিনতে ও গাড়িতে বোঝাই করতে খরচ হয়েছে ৫০ পয়সা। আড়তদারি ১ টাকা। মোকাম থেকে আড়তে আসতে আলুর কেজিতে ৩ টাকা খরচ হয়েছে। সব মিলে কারওয়ান বাজারের আড়তে আসতে পড়েছে ৩৪ টাকা। সেই আলু খুচরা বাজারে ৪০-৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

বিভিন্ন আড়তে পাবনার পেঁয়াজ ৭০ টাকা ও ফরিদপুরেরটা ৬৮ টাকা কেজি, কেজিতে ট্রাক ভাড়া ২ টাকা, বস্তা কেনা ও ট্রাকে ওঠাতে-নামাতে ১ টাকা, এসব ধরেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, কিন্তু সেই পেঁয়াজ বিভিন্ন খুচরা বাজারে ৭০-৭৫ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

আড়তদাররা জানান, প্রতি বস্তায় গাড়ি ভাড়া ৪৫ টাকা, লেবার খরচ ৫ টাকা ধরে ২৮ চাল কেনা হয়েছে ২ হাজার ৫২০ টাকা, যা ২ হাজার ৫৮০ টাকা বা ৫১ টাকা। কিন্তু সেই চাল খুচরা পর্যায়ে ৫৫-৬০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে। ৬৬ টাকার মিনিকেট চাল ৭০ টাকা।

সড়কে বিভিন্নভাবে চাঁদাবাজি হওয়ায় ট্রাক ভাড়া বেশি। ঠাকুরগাঁও থেকে ২৯-৩০ হাজার টাকা, বগুড়া থেকে ২৪ হাজার টাকা। এই ভাড়া কম হলে আরও কম দামে এসব পণ্য বিক্রি হতো। ট্রাকের ড্রাইভাররাও স্বীকার করেন, নতুন সরকার আসার পর বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদাবাজি হচ্ছে। এ জন্য ভাড়াও বেশি। আজ সোমবার কারওয়ান বাজার, কৃষি মার্কেটসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে সরেজমিনে ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সড়কে চাঁদাবাজির ব্যাপারে জানতে চাইলে ট্রাক ড্রাইভার মাসুদ জাতীয় অর্থনীতিকে বলেন, ভোটের পর সড়কে চাঁদাবাজি আরও বেড়ে গেছে। ঢাকায় ট্রাকভর্তি আলু আনতে মোট ৯ জায়গায় চাঁদা দিতে হয়েছে। এটা আগে কম লাগত। প্রত্যেক জায়গায় পৌর কর থেকে শুরু করে পরিবহন সমিতির নামে টোকেন দিয়ে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। সড়কে দাঁড় করিয়ে ৫০ থেকে শুরু করে ১০০ টাকার টোকেন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই চাঁদাবাজি না করলে ট্রাক ভাড়া অনেক কম হতো।

আড়তে আলুর কেমন দাম জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের আড়তদার জাকির বাণিজ্যালয়ের বিল্লাল জাতীয় অর্থনীতিকে বলেন, ‘দাম আগের চেয়ে কমেছে। রংপুরের আলু ৩৪ টাকা কেজি। ট্রাক ভাড়া, বস্তা কেনা, ট্রাকে ওঠানামা ধরেই এই দাম ধরা হয়েছে। সঙ্গে আমাদের কেজিতে ১ টাকা কমিশন রয়েছে। এটা মোকামে ৩১ টাকা কেজি কেনা। এর কোয়ালিটি অত ভালো না। তাই দাম একটু কম।’ একই বাজারের মেসার্স মক্কা ট্রেডার্সের হাবিবও জানান, সব খরচ ধরে আলু কেজি ৩০ টাকা। দাম কমায় বিক্রি বেশি হচ্ছে।

ভালো কোয়ালিটির হলে দাম আরও বেশি। একই বাজারের আড়তদার বিক্রমপুর ভাণ্ডারের মালিক সবুজ। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, সব খরচ ধরে বিক্রি ৩৭-৩৮ টাকা কেজি। ট্রাক ভাড়া বেশি হওয়ার কারণেই আলুর দাম বেশি পড়ছে। তা কম হলে আরও কম দামে আলু দেওয়া যেত। রংপুর থেকে সাড়ে ১৪ টনের ট্রাক ভাড়া ২৪ হাজার, বগুড়ার ভাড়া ২০ টাকা পড়েছে। এটা কম হলে আলুর দাম আরও কম হতো। ক্রেতারা কম দামে কিনতে পারতেন। শুধু এই কয়েকজনই না, বাজারের অন্যান্য আড়তদারও জানান, সড়কে চাঁদাবাজি হয়। এ জন্য ট্রাক ভাড়াও বেশি। এটা কম হলে ভোক্তাদের কম দামে আলু দেওয়া যেত।

আড়তে আলুর দাম কম হলেও বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। টাউন হল বাজার, কৃষি মার্কেট, কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলুতে আরও ৫-৮ টাকা বেশি দাম ভোক্তাকে দিতে হচ্ছে। আলুর কেজি কত জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা হালিম বলেন, ছোট আলুর কেজি ৪০ টাকা। তা কেনা ৩৬ টাকায়। একই বাজারের তারেকসহ অন্যান্য বিক্রেতা বলেন, আলুর কেজি ৪০-৪৫ টাকা। এদিকে টাউন হল বাজারের রাশেদও জানান ভালো আলু ৪৫ টাকা কেজি। মানে একটু কমটা ৪০ টাকা কেজি।

সেই আলু কৃষক পর্যায়ে কি দাম? তা জানতে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় হাট বগুড়ার মহাস্থানে দেখা যায় আকার ও মানভেদে প্রতি মণ লাল আলু ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা বা ৩২-৩৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে সাদা আলুর দর কিছুটা বেশি, ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকা বা ৩৫-৩৬ টাকা কেজি। শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর এলাকার চাষি মো. আইনুল হক বলেন, ‘পাইকারি বাজারে আলু বিক্রি করেছি ৩৫ টাকা। গত বছর এ সময় বিক্রি হয়েছে ২০-২৫ টাকা কেজি।’

দেশের অন্যতম বৃহৎ আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল মুন্সীগঞ্জের আলু বিক্রেতা রমিজ মিয়া জাতীয় অর্থনীতিকে বলেন, ‘গত ৭ দিনে আলুর দাম কেজিতে কমেছে ১০ থেকে ১২ টাকা। গত সপ্তাহে খুচরায় ৫৫-৬০ টাকা কেজি আলু বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা দরে।’

পেঁয়াজের ঝাঁজ কমেনিঃ

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, আড়তে ৬৮-৭০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হলেও খুচরা পর্যায়ে তা ৭৫ টাকায় ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের শাহ আলী ট্রেডার্সের শফিকুল ইসলাম জাতীয় অর্থনীতিকে বলেন, ভালো মানের পরিষ্কার পেঁয়াজের কেজি ৭০ টাকা। মিনহাজ ট্রেডার্সের খলিল বলেন, ‘ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৬৮ টাকা। ট্রাক ভাড়া, বস্তা কেনা, লোড-আনলোডসহ বিভিন্ন খাতে খরচ কেজিতে ৩-৪ টাকা। আমরা বিক্রি করলে কেজিতে ১ টাকা কমিশন পাব।’ অন্যান্য আড়তদারও একই তথ্য জানান। তারা বলেন, ট্রাক ভাড়ার কারণে দাম বেশি। ফরিদপুর থেকে প্রতি বস্তায় ১১০-১২০ টাকা লাগছে।

আড়তে এই দামে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে কেজিতে ৫-৬ টাকা বেশি। কৃষি মার্কেটের খুচরা বিক্রেতা জানান, ৭০-৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। কারওয়ান বাজারসহ অন্যান্য বাজারেও এই দামে বিক্রি হচ্ছে বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান।

ঢাকার বাইরেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। পাবনার বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, মানভেদে পাবনায় প্রতি কেজি নতুন পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। খুচরা মূল্য ৭৫ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত।

পাবনার বড় বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. জনি বলেন, পেঁয়াজের এই দাম বৃদ্ধিতে চাষিরা কিছুটা লাভবান হলেও মূলত পকেট ভরছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। অল্প সময়ে মধ্যে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে জানান সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম।

মন্ত্রীর হুমকিতেও এক পয়সা কমেনি চালের দাম:

ধানের ভরা মৌসুমেও কমছে না চালের দাম। রাজধানীর আড়ত থেকে শুরু করে খুচরা পর্যায়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে। কারওয়ান বাজারের জনপ্রিয় রাইস এজেন্সির শফিক এ প্রতিবেদককে বলেন, চালের দাম কমেনি। মন্ত্রী হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরও এক পয়সা কমেনি। বরং আগের চেয়ে বস্তায় ৭০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে মিনিকেট ৬৬-৬৯ টাকা কেজি ও ২৮ চাল ৫১ টাকা কেজি। শেরপুর থেকে চাল আনতে ট্রাক ভাড়া, লেবারসহ আরও খরচ রয়েছে। তাতে বস্তায় ৫০ টাকা পড়ে যায়। খরচ বাদ দিয়ে বস্তায় ৫০-৬০ টাকা থাকে।

একই বাজারের হাজি ইসমাইল এজেন্সির জসিম উদ্দিন বলেন, করপোরেটরা মজুতদারি করার কারণে চালের দাম বেড়েছে। কারণ তারা বেশি করে মজুত করছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে কমবে না চালের দাম। সব খরচ বাদে মিনিকেট ৬৮ টাকা, যা আগে ৬২-৬৪ টাকা ছিল। ২৮ চাল ৫১-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি মার্কেটের প্রায় আড়তেই চালের দাম বেশি বলে জানা গেছে। শাপলা রাইস এজেন্সির শিপন বলেন, আগের রেটই আছে। কমেনি চালের দাম। মিনিকেট ৬৬-৬৮ টাকা, ২৮ চাল ৫২-৫৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সেই চাল বিভিন্ন খুচরা বাজারে কেজিতে ২-৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকার বাইরেও বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। দিনাজপুরে খুচরা বাজারে কমেনি দাম। দিনাজপুর শহরের সবচেয়ে বড় চালের বাজার বাহাদুর বাজারে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে আগের দামেই রয়েছে চাল। প্রতি কেজি মিনিকেট ৬৫ টাকা, ২৯ চাল ৫৫-৬০ টাকা, আটাশ চাল ৬০ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৪৫-৪৮, সুমন স্বর্ণা ৫২ টাকা।

কুষ্টিয়াতেও খুচরা বাজারে কমেনি চালের দাম। এনএস রোডের পৌর বাজারে দেখা যায়, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে প্রতি কেজি ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। কাজললতা ৬০ টাকা কেজি এবং মোটা আটাশ চাল ৫৫ টাকা কেজি, গত সপ্তাহেও যা একই দামে বিক্রি হয়েছে।

জেলা চালকল মালিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, চালের বাজার ওঠানামা করে ধানের বাজারের ওপর। এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। ধানের বাজার না বাড়লে চালের বাজার আরও কমবে

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি