শেরপুর জেলা প্রতিনিধি: শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী থেকে ঢাকায় দূরপাল্লার যাত্রীবাহি গাড়ি বন্ধ রয়েছেন বিগত ৫ ই মার্চ থেকে। এ নিয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিক এবং বাস চলাচলে যুক্তদের সাথে শেরপুর জেলা বাস কোচ মালিক সমিতির বিরোধ এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে অবৈধ হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিরসনে ৯ মার্চ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় শেরপুর জেলা শহরের বাগরাকসা নতুন বাসটার্মিনালস্থ শেরপুর জেলা বাস কোচ মালিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন জেলার বাস কোচ মালিক সমিতির সভাপতি ও শেরপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ ছানুয়ার হোসেন ছানু। এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান যে শেরপুরে সড়ক পরিবহন সেক্টরে কোথাও কোন চাঁদাবাজি নেই। তিনি সৃষ্ট জটিলতা এবং যাত্রী হয়রানির জন্য ঝিনাইগাতী উপজেলার বাসিন্দা আলহাজ্ব সামিউল হক ফকিরকে দায়ী করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে জানান যে ‘ শাহ্ ফকির এক্সপ্রেস ‘ নামে একটি বাস রুট পারমিট বিহীনভাবে ঝিনাইগাতী থেকে ঢাকার আশুলিয়ায় অবৈধভাবে চলাচল করে যেটি সামিউল হক ফকিরের মালিকানাধীন।
নিয়মনীতি না মেনে অরাজকতা ও নৈরাজ্য বন্ধ করতে তাকে শেরপুর জেলা বাস কোচ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি সংগঠনের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে তার বাস সার্ভিস আশুলিয়ায় চালাতে থাকেন।পরে সংগঠনের পক্ষ থেকে নবীনগর বাস টার্মিনাল এলাকায় মালিক সমিতির পক্ষ থেকে শাহ্ ফকির এক্সপ্রেস গাড়িটিকে ৭ দিনের জন্য চালানো নিষেধ করা হয়। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে আলহাজ্ব সামিউল হক ফকির ও ঝিনাইগাতীর অপর একটি গাড়ির মালিক সামিউল ইসলাম সাদা মিয়া অবৈধ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে জোরপূর্বক গত ৫ মার্চ ঝিনাইগাতী থেকে ঢাকাগামী বেশ কয়েকটি বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। তারা ব্যক্তিগত স্বার্থে যাত্রী হয়রানি এবং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। এব্যাপারে জেলা বাস কোচ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন,পুলিশ সুপার,ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে পত্রাদেশ দেয়া হয় এবং সামিউল ফকির ও সাদা মিয়ার অনৈতিক কর্মকান্ড ও অরাজকতা বন্ধে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকৃত বিষয়টি জনসম্মুখে তুলে ধরা হয়।
এতে ঝিনাইগাতী উপজেলার বিভিন্ন স্থানের যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শেরপুর জেলা বাস কোচ মালিক সমিতির কার্যকরি পরিষদের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ মার্চ মঙ্গলবার সকাল থেকে ঝিনাইগাতী উপজেলার আহাম্মদ নগর অস্থায়ী বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল শুরু করার কথা জানানো হয়। তিনি সকলকে নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে আহম্মদ নগর থেকে চলাচল করার আহ্বান জানান এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে,এত ঝিনাইগাতী বাজারের যানজট নিরসন হবে।
এসময় জেলার বাস কোচ মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক স‚দীপ ঘোষ,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সিংহ, মমিনুল হক, কার্যকরি সদস্য ওয়াহিদুল আনোয়ার দিপু, শেরপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আ: হান্নান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমসহ বাস কোচ মালিক সমিতির সদস্য ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দগণ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আজ ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিক এবং শ্রমিক ঐক্য নামে মাইকিং করে প্রচার করা হচ্ছে যে ঝিনাইগাতী থেকে চলাচলকারী সকল গাড়ি পূর্বের সময়সূচী অনুযায়ী আগের কাউন্টার থেকে ঢাকায় চলাচল করবে। ইতিমধ্যে সকল কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি শুরু করতে দেখা গেছে। এতে নতুন করে আবারো জটিলতা সৃষ্টির আশংকা দেখা দিয়েছে।
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঝিনাইগাতী বণিক সমিতির সভাপতি মুখলেছুর রহমান খান ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, শেরপুর জেলা মালিক সমিতির সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। কিন্তু তাদের নেয়া সিদ্ধান্ত এক তরফা এবং এতে ঝিনাইগাতীর যাত্রীদের হয়রানি বৃদ্ধি পাবে। ঝিনাইগাতি থেকে ৩ কিঃমিঃ দূরে আহাম্মদনগর থেকে গাড়ি চলাচলের কোন যৌক্তিক কারন নেই। রোড পারমিটের বিষয়ে ছামিউল হক সাদা মিয়া বলেন সকল গাড়ির রুট পারমিট রয়েছে ঢাকা মহাখালী পর্যন্ত। কিন্তু একাধিক গাড়ি আশুলিয়ায় চলাচল করলেও শুধু শাহ ফকির এর গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া অন্যায় এবং এর প্রতিবাদে সকলে নিজ উদ্যোগে সাময়িকভাবে গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছিলেন। আমরা বিষয়টির একটি ন্যায়সঙ্গত সমাধানে শেরপুর জেলা, ময়মনসিংহ বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু ঝিনাইগাতী থেকে ৩ কিঃমিঃ দূরে আহাম্মদনগর থেকে গাড়ি চলাচলে যাত্রীদের হয়রানি ও ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে আমরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি।