প্রতি শুক্রবার বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বাবুর বাড়ি গ্রামে পরিবারকে খরচের টাকা পাঠান উবার ড্রাইভার হাফিজউদ্দিন।
সারাদিন ঢাকার অলি-গলিতে যাত্রী পরিবহন করতে গিয়ে হাফিজউদ্দিন খুব ভালোই বোঝেন খরচ কমানো কতোটা জরুরি। সে কারণে অন্য সব কিছুর মতো বাড়িতে টাকা পাঠাতে কতোটা খরচ হয়, সেটাই তার প্রধান বিবেচনা। ফলে অবধারিতভাবে তার পছন্দ ‘নগদ’।
“আরে ভাই, পাঁচ হাজার টাকা পাঠাতে গিয়ে যদি দুই কেজি সবজি কেনার পয়সা বাঁচানো যায় তবে মন্দ কি!” বলছিলেন হাফিজউদ্দিন।
ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানও যখন একটা জায়গার পর আর পারে না, সেখান থেকেই যাত্রা শুরু হয় ‘নগদ’-এর এগিয়ে চলা। সাশ্রয়ী ও সহজপ্রাপ্যতার বিবেচনায় হাজিফউদ্দিনের মতো খেটে খাওয়া মানুষদের কাছে ‘নগদ’-ই এখন প্রধান পছন্দ। অন্যদিকে আবার শহুরে প্রযুক্তিবান্ধব মানুষদের কাছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বাড়তি চার্জ ছাড়া গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি-ইন্টারনেটের বিল বা বীমার প্রিমিয়াম প্রদান, স্বাচ্ছন্দ্যময় পেমেন্ট—এসব কারণেও মাত্র দুই বছরের যাত্রায় ‘নগদ’ হয়ে উঠেছে তিন কোটি গ্রাহকের এক বিশাল পরিবার। প্রতিদিনের লেনদেন ছাড়িয়েছে তিনশ কোটি টাকা।
আর সব কিছুর ওপরে মোবাইলের *১৬৭# ডায়াল করেই অ্যাকাউন্ট খোলা, গ্রাহকের তথ্য এবং তার অর্থের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধান করাও গ্রাহক পছন্দের অন্যতম কারণ। তালিকায় আছে ডিজিটাল কেওয়াইসির প্রচল করা, অ্যাকাউন্ট না থাকলেও যেকোনো নম্বরে টাকা পাঠানোর সুবিধা। দেশের আর্থিক খাতে এসব ডিজিটালাইজেশনের সূচনা ‘নগদ’-ই করেছে; যার কারণে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সংখ্যায়ও দেদার উন্নতি হয়েছে।
হাজারে ভ্যাটসহ সাড়ে এগারো টাকা খরচে ক্যাশ আউট করার সুযোগ আর কোথায় আছে! যদি কেউ অ্যাপ ব্যবহার না করেন, তাহলে খরচটা সাড়ে চৌদ্দ টাকায় গিয়ে পড়বে, সেটিও বাজারে প্রচলিত খরচের চেয়ে অনেক কম। কাজের জন্যে যে স্মার্টফোনটি হাফিজউদ্দিন কিনেছিলেন, সেটি এখন ‘নগদ’-এর কম খরচের সেবা নিতেও সহায়তা করছে।
অনেক সময় বন্ধুদের কাছ থেকে ধার-দেনা করতেও এখন আর বাড়তি খরচ হয় না। কারণ, অন্যখানে প্রতি লেনদেনে যেখানে ৫ টাকা চার্জ, ‘নগদ’ অ্যাপে সেটা ফ্রি। সবচেয়ে কম খরচে ইন্টারনেট ডাটা বান্ডেলও কিনছেন মুহূর্তে।
মাত্র দুই বছর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে উদ্বোধন হওয়া ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ এভাবেই অনেক হাফিজউদ্দিনের জীবনগল্পের অংশ হয়ে উঠেছে।
তাদের প্রায় সবাইকেই ডিজিটাল জীবন উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রেও ‘নগদ’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
“সাধারণ মানুষের জীবনাচরণে খানিকটা হলেও পরিবর্তন আনার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করেছি সবসময়। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, লেনদেনের ক্ষেত্রে দেশের মানুষের যে অভ্যাসগত ধরন সেখানে সামান্য পরিবর্তন করতে পারলেই অনেক বড় কাজ হবে,” এভাবে ‘নগদ’-এর শুরুর দিকটার ভাবনার গল্প বলছিলেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক। মিশুকের হাত ধরেই ‘নগদ’ এর স্বপ্ন গড়িয়ে বাস্তবতায় ধরা দিয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত; অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সেই কাঙ্ক্ষিত ডিজিটালাইজেশন নিশ্চিত করতেই কাজ করছে ‘নগদ’। “সব কাজ তো আর সরকার করে দেবে না। সরকার নীতি নির্ধারণ করে দেবে আর সেটিকে বাস্তবতায় রূপান্তর করবে পরের ধাপের সবাই। সে কারণেই আমরা সরকারের একটি অংশকে খুঁজছিলাম, যাদের সঙ্গে মিলে সরকারের ভিশনকে বাস্তবতা দিতে পারি,” বলেন মিশুক।
ডাক বিভাগ, মিশুক আর ‘নগদ’-এর চিন্তা এবং সে অনুসারে কর্মপদ্ধতি যে কতোটা সফল হয়েছে তার প্রমাণ আজকের ‘নগদ’। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে পরিচালিত এ ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসটি ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে সরকারকে উদাহরণতুল্য সাফল্য এনে দিয়েছে।
ফলে সরকারের সব আর্থিক সেবা কার্যক্রম একের পর এক যুক্ত হচ্ছে ‘নগদ’-এর সঙ্গে। ‘নগদ’-কে ব্যবহার করেই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা বিতরণেও স্বচ্ছতা নিয়ে এসেছে। গত বছর করোনা ভাইরাসের কারণে কাজ হারানো মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ থেকে শুরু হয়েছিল। সেবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ১৭ লাখ মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক বিতরণ করা হয় ‘নগদ’-এর মাধ্যমে।
দীর্ঘদিন প্রাথমিক পর্যায়ের উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ ভাতা বিতরণে যে অনিয়ম আর দুর্নীতি হয়েছে সেটি পরিষ্কার করতেও ডেকে নেওয়া হয় ‘নগদ’-কে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনায় গত ডিসেম্বরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর ‘নগদ’-এর সঙ্গে চুক্তি করে দেড় কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা বিতরণের। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যেই সব শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন ও অভিভাবকদের মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে তৈরী করা হয় এক ডেটাবেজ। তারপর ভাতা বিতরণ যেখানে গ্রাহকের একটি টাকাও বাড়তি খরচ হচ্ছে না, অথচ সরকারের খরচ কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পাঁচ হাজার কোটি টাকার চার ধরনের ভাতা বিতরণের তিন-চতুর্থাংশই সরকার দিয়েছে ‘নগদ’-কে। তার আগে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব-এর ৯০তম জন্মদিনে দুস্থ নারীদের সহায়তা দেওয়া, কোভিড টেস্টের বিল পরিশোধে একমাত্র ‘নগদ’-এর এগিয়ে আসা সেবাটির প্রতি সবার আস্থা আরো বাড়িয়েছে।
মাত্র দুই বছরে নিত্যনতুন উদ্ভাবন আর চমকপ্রদ সেবা দিয়ে ‘নগদ’ আজ দেশের সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস; যেখানে মোট গ্রাহকের ৩০ শতাংশ যুক্ত আছে। গ্রাহক ভালোবাসায় চলতি বছরের মধ্যেই মার্কেট শেয়ার ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন তানভীর আহমেদ মিশুক।