গত ৩০ জানুয়ারি রোজ মঙ্গলবার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম ওরফে সম্রাট (দাপ্তরিক পরিচিতি নম্বর ৬০২২২৭)বর্তমানে আশুগঞ্জ নদীবন্দর সরাইল আখাউড়া স্থল বন্দর মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের বিষয়ে আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির অভিযোগের আলোকে “সওজ প্রকৌশলী আব্দুর রহিমের আয় বহির্ভূত সম্পদ ও রাজকীয় জীবন যাপন” শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি পত্রিকায়। সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। তাই নিজের গা বাঁচাতে নানান ছলচাতুরির আশ্রয় নেন প্রকৌশলী রহিম।
সম্প্রতি তার বিষয়ে উঠে আসা নানান দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ সরজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায় প্রকল্প পরিচালক হয়েই নিজের ভাগ্য বদলে ফেলেছেন তিনি, হঠাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়া যাকে বলে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় রাজধানীর ধানমন্ডির ৯/এ সড়কের ১২১ নম্বর বাড়ির ৫/বি নং ফ্ল্যাট এর মালিক তিনি। এবং তার যৌথ অর্থায়নে একই সড়কের ১০১ নম্বর বাড়িটি নির্মাণাধীন অবস্থায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ বাড়িতে রয়েছে তার ফ্ল্যাট। নিজের একটি টয়োটা ব্র্যান্ডের গাড়ি থাকলেও যা তার শশুর সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার বলে প্রচার করে থাকে প্রকৌশলী আব্দুর রহিম। সম্প্রতি নাকি কালো রঙের দৈত্যাকার জিপ গাড়ি কিনেছেন নিজ ব্যবহারের জন্য, যা নিশ্চিত করেছেন তার বাসভবনের আশেপাশের লোকজন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় পার্সেনটেজের টাকা পকেটে না ঢুকলে ঠিকাদারদের দফারফা এক করে দেন তিনি। ঠিকাদারদের বিভিন্ন পন্থায় জিম্মি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। দেশে বিদেশে নামে বেনামে করেছেন কোটি কোটি টাকার অর্থ ও সম্পদ। এত প্রভাব খাটানোর পেছনের কারিগর নাকি তার শ্বশুরবাড়ির এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, যিনি একটি বেসরকারি চ্যানেলের সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। সেই সংবাদ কর্মীর ও প্রভাব খাটান তিনি।
প্রকৌশলী আব্দুর রহিম সম্রাট সম্পর্কে তার এক নিকটস্থ ব্যক্তি জানায় ধানমন্ডি ৯/এ রোডের ১০১ নম্বর বাড়িতে প্রকৌশলী আব্দুর রহিমের অংশীদারিত্ব রয়েছে। যার সচিত্র প্রমাণ রয়েছে দৈনিক জাতীয় অর্থনীতির কাছে।
সংবাদ প্রকাশের পূর্বে সত্যতা যাচাইয়ে দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি পত্রিকার সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুর রহিমের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি বিভিন্ন ছলচাতুরির আশ্রয় গ্রহণ করেন।
সংবাদ প্রকাশের পরও থেমে যাননি প্রকৌশলী রহিম, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষজন দিয়ে সংবাদ থামানোর অপপ্রয়াস চালিয়ে সফল না হয়ে শেষ-মেষ সম্পাদকের নম্বরে বিকাশ করে কিছু টাকা পাঠিয়ে সংবাদ বন্ধের অপপ্রয়াস চালায় এই প্রকৌশলী। এতে দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি পত্রিকার সম্পাদক প্রচন্ড বিব্রত বোধ করেন, এবং তাৎক্ষণিক বিকাশের মাধ্যমে সেই টাকাটি ফিরিয়ে দেন এবং এই অপপ্রয়সের নিন্দা জ্ঞাপন করেন।
প্রকৌশলী আব্দুর রহিমের কর্তৃক সংবাদ ধামাচাপা দেওয়ার অপপ্রয়াসের ব্যাপারে সম্পাদক কিবরিয়া চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমের কল্যাণে এখন সবকিছুই সহজতর হয়ে গেছে, কেউ টাকা নিতে না চাইলেও তার নম্বেরে অনায়েসেই টাকা পাঠানো যায়। প্রকৌশলী আব্দুর রহিম প্রযুক্তির অপব্যবহার করে আমার অনুমতি ব্যতীত আমার বিকাশ নম্বরে কিছু টাকা পাঠায়, এবং সংবাদ না ছাপানোর কুপ্রস্তাব দেয়। ঘটনাটি আমাকে খুব বিব্রত করে। বিগত ৩৬ বছরের সাংবাদিকতার জীবনে এমন হাজারো কুপ্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সকল দুর্নীতি প্রতিরোধের ব্যাপারে সদা সচেষ্ট সড়ক, পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সচিব মোহাম্মদ আমিন উল্লাহ নূরী।
বিগত সময় গুলোতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নানান দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সচিব আমিনুল্লাহ নুরী কে। সওজে’র দুর্নীতির কোন প্রতিবেদন চোখে পড়লেই তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটি গঠন করে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে তাকে। এতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন অনেকেই। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকায়, অনেক দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
টানা চতুর্থ মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সরকার প্রধান প্রথমেই ঘোষণা করেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের, যা পুনঃ পুনঃ ব্যক্ত করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিমের আয় বহির্ভূত সম্পদ ও ব্যায়ের বিস্তর অনুসন্ধান চালাচ্ছে দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি। সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের অনেক সৎকর্মকর্তারা বলছে মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশন প্রকৌশলী রহিমের আয়ের বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করলে আরো থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।