এলডিসি থেকে উন্নয়শীল দেশের উত্তরণ ঘটলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও ওষুধ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। একইসঙ্গে এলডিসি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সকল সমস্যার মুখোমুখি হবে, তা সমাধানে আগেভাগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্থাপিত কর্মপরিকল্পনাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ করে কমিটি। এছাড়া রাষ্ট্রদূতদের নেতৃত্বে পৃথিবীর যে কোন একটি বা দুটি দেশে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর মাধ্যমে অনাবাদি জমি চাষাবাদের বিষয়ে পাইলট প্রকল্প গ্রহনের সুপারিশ করা হয়।
সংসদ ভবনে আজ অনুষ্ঠিত ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র বৈঠকে এ আশঙ্কা ও এসব সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান। পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দ: প্রিন্স, মো. আব্দুল মজিদ খান, নাহিম রাজ্জাক এবং কাজী নাবিল আহমেদ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকে শেষে কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়নের সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে খুশি হচ্ছি। কিন্তু উত্তরণের ফলে যে প্রভাবগুলো পড়বে তা বিবেচনা করতে হবে। প্রভাবগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বেকারত্ব বেড়ে যাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য একটি কোর কমিটি গঠন করেছে বলে কমিটিকে জানিয়েছে।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান আরও বলেন, উন্নয়নশীল দেশে গেলে আমরা এখন যেসব সুবিধা পাচ্ছি, তার অনেক কিছু বন্ধ হয়ে যাবে। এতে অনেক ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে আমাদের ঔষধ শিল্প ও গার্মেন্ট শিল্পের বিষয়টি দেখতে হবে। ওষুধ শিল্পের প্যাটেন্ট বাবদ টাকা প্রদান করতে গেলে ওষুধ সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাবে। দেখা যাবে, প্যারাসিটামলের একপাতা (১০টি ট্যাবলেট) দুইশ’ টাকা হয়ে গেছে। এটা যাতে না বাড়ে তার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।
তিনি আরো জানান, আমরা এখন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) থেকে যেসব সুবিধা পাচ্ছি, সেগুলো আরও ১০ বছর বাড়ানো যায় কিনা, সেই বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা করতে হবে। আমরা একটি চুক্তির আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে অস্ত্রবাদে সবধরনের পণ্য বিনাশুল্কে এখন রফতানি করতে পারি। এগুলো যাতে অব্যাহত থাকে তার জন্য এখন থেকেই আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।
ফারুক খান আরো বলেন, অতীতে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হওয়ায় অনেক দেশ কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়েছে। তারা এলডিসি থেকে বেরিয়ে আবার এলডিসি হয়ে গেছে। এসব বিবেচনা করতে আমাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে হবে। আমরা বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করি। কিন্তু সময় মতো শেষ করতে পারি না। এতে সময় বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকল্পের খরচও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এগুলো বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতি যেটা আছে তা বন্ধ করতে হবে। উন্নয়ন শীল দেশে গেলে সব সেক্টরে ট্যাক্স বাড়াতে হবে। কিন্তু আয় না বাড়লে ট্যাক্স বাড়ালে তো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। এগুলোর বিষয়ে ভাবতে হবে।
সংসদের গণসংযোগ বিভাগ জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হবে, তা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে ব্রাজিলে রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী এক বছরের মধ্যে সেখানে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর মাধ্যমে ট্রেড ফেয়ার আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া বৈঠকে স্পেনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা,বাংলাদেশ-স্পেন ট্যুরিজমকে উৎসাহিত করা এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কের নতুন দুয়ার উন্মোচনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করে কমিটি।
বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ব্রাজিল ও স্পেনের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।