মুস্তাকিম নিবিড়ঃ
সারাদেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। সেই সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে চলছে শুদ্ধি অভিযান। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত ইশতেহারের অন্যতম একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। সরকারের প্রতিটি বিভাগে ব্যাপক উন্নয়নের আলোর পিছনে থাকা অন্ধকারে ঘাপ্টি মেরে রয়েছে অনেক দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। যারা নানান দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে সরকারের সফলতাকে ম্লান করার বৃথা চেষ্টায় মত্ত হয়ে আছে। বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট সফলভাবে সম্পন্ন করে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে আছে বাংলাদেশ। আর সেখানে যারা দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সরকার তথা দেশের টাকা তসরুফ করে দেশ-বিদেশে গড়ে তুলছেন সম্পদের পাহাড় তাদের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। যদিও শুদ্ধি অভিযানে কিছু টার্গেটেড ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের উপর বিচারের খড়গ নেমে পড়লেও বেশিরভাগ দুর্নীতিপরায়ণ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও তাদের মদদাতা কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীরা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে সওজের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের প্রত্যক্ষ মদদ ছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো বিগত দিনে অনিয়ম করে কিভাবে কাজ বাগিয়ে নিলো?
যেসব কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীরা ঠিকাদারদের সাথে নানান অনিয়মে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে ধোঁয়াশায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট সবাই। কেউ কেউ বলছে অসাধু কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের দুর্নীতির চিত্র আড়াল করতেই নাকি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে চলছে কালো তালিকা ভুক্ত করণ নাটক। যেখানে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোকে গিনিপিগের মতো ব্যবহার করছে শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত কর্মকর্তাগণ। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে ঠিকাদারদের রাঘব বোয়াল খ্যাত আবেদ মনসুর ও হাসান টেকনো বিল্ডার্স এর দু তিনটি ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে তদন্ত চলাকালীন সময় বেরিয়ে পড়েছে আরো কতিপয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের রেকর্ড। সম্প্রতি আবেদ মনসুর ও হাসান টেকনো বিল্ডার্সকে দু বছরের জন্য সওজের যেকোনো ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে স্থগিত রেখে করা হয় কালো তালিকাভুক্ত। যাতে অনেকেই স্বস্তি পেয়েছেন। সূত্রে জানা যায়, আবেদ মনসুর ও হাসান টেকনো বিল্ডার্সের প্রতারণার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড, মোজাহার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, মঈন উদ্দিন বাঁশি লিমিটেড, ও রানা বিল্ডার্সের কিছু ভুয়া সার্টিফিকেটের খোঁজ। ঠিকাদারদের রাঘব বোয়াল খ্যাত আবেদ মনসুর কে নিয়ে রয়েছে নানান আলোচনা সমালোচনা। কেউ কেউ আবেদ মনসুর কে বলে থাকে রাজধানী ঢাকার সবুজ বিপ্লব, যিনি নিজস্ব অর্থায়নে শত কোটি টাকার গাছ লাগিয়ে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক কে করে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন। নিয়েছেন আগামী ১০ বছরের জন্য গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব। অনেকের ধারণা সওজের প্রভাবশালী ঠিকাদার রাজধানী ঢাকার সবুজ বিপ্লব খ্যাত আবেদ মনসুরের নিজ অর্থায়নে শহর বিউটিফিকেশন এর উদ্যোগই চক্ষুশূল হয়ে উঠেছেন অনেকের কাছে। অভিযুক্ত কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হতে বিপুল অংকের অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে তাদের তদন্ত নিয়ে কালক্ষেপন করা, লঘুদণ্ড দিয়ে ছেড়ে দেয়া ও চলমান টেন্ডারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ প্রদান করার মত অভিযোগ রয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের উপর।
অভিযোগ রয়েছে মাসুদ হাইটেক লিমিটেড এর প্রায় সকল জোনেই ইজিপি অনুযায়ী চলমান কাজের সঠিক তথ্য প্রদান না করলেও তাদের খুলনা জনে পাঁচ মাসের জন্য কালো তালিকাভুক্তি করার মতো লঘুদন্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। মেসার্স সালেহ আহমেদ লিমিটেড কে হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড ও আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশনের সাথে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জোনে বেশ কিছু দরপত্রে অংশগ্রহণ করার অজুহাতে সারা দেশব্যাপী দুই বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্তি করা হয়, যা তাদের প্রতি অবিচার করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। তাহলে প্রশ্ন ওঠে আবেদ মনসুর ও হাসান টেকনো বিল্ডার্স কে যদি সারাদেশব্যাপী সকল ডিপার্টমেন্টে দুই বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্তি করা হয়, তাহলে হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন, মোজাহার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, মাইনুদ্দিন বাঁশি লিমিটেড, রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড এর মত রাঘব বোয়াল ঠিকাদারদের জালিয়াতি ও ভুয়া সার্টিফিকেট এর জন্য কেন এম এ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড জে এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডে, সাগর ইনফো বিল্ডার্স লিমিটেড, কনস্ট্রাক ইঞ্জিনিয়ারিং, রিলায়েবল বিল্ডার্স লিঃ এনডিই, ওটিবএল, মির ব্রাদার্স সহো সারা দেশব্যাপী যারা রাঘব বলদের সাথে জেভি করেছে তাদেরকেও কেন দুই বছরের জন্য কালো তালিকায় ভুক্ত করা হবে না। প্রশ্ন থাকে এটা কি কেবল বিচার বৈষম্য? নাকি সবার সাথেই দেন দরবার হয়ে যাওয়ায় তদন্তের নামে করা হচ্ছে কালক্ষেপণ। বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায় শুদ্ধি অভিযানের নামে অভিযান কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত সকল কর্মকর্তাই বাগিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তাদের টাকা দিলেই নাকি লঘু দন্ডের নামে করা আইওয়াশ। বাকি সব সুযোগ সুবিধা থাকে বহাল তবিয়তে। সুযোগ করে দেওয়া হয় চলমান টেন্ডার এ অংশগ্রহণের। অভিযোগ উঠে ইতিমধ্যে দুইটি ঠিকাদার কোম্পানির কাছ থেকে ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন শুদ্ধি অভিযানে নিয়োজিত দুই কর্মকর্তা। বিনিময় তাদেরকে লঘুদন্ডে দন্ডিত করে সকল সুযোগ-সুবিধাই অব্যাহত রাখেন।
যে সকল কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠে ঠিকাদার সিন্ডিকেট। নানান জালিয়াতি অনিয়ম ও দুর্নীতি যারা হাতে ধরে শিখিয়ে দেন , চলমান শুদ্ধি অভিযানে তারা কেনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে এ প্রশ্ন করছে বোদ্দাজনেরা। কেন অসাধু কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব নেবেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগেও কেন হচ্ছে না তদন্ত? তাহলে কি অসাধু কর্মকর্তাদের দুর্নীতি আড়াল করতেই শুদ্ধি অভিযান?
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চলমান শুদ্ধি অভিযানে এখন পর্যন্ত যারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে, অর্থের বিনিময়ে শুদ্ধি অভিযানকে যারা কলুষিত করছে, তাদের বিরুদ্ধে দৈনিক জাতীয় অর্থনীতির অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। দূর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে যে সকল কর্মকর্তা ও ঠিকাদার সিন্ডিকেট সরকারের সুনাম ক্ষুন্নে লিপ্ত রয়েছে তাদের নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন দেখতে চোখ রাখুন দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি পত্রিকায়।