ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে খুলনার ৫টি উপজেলার ৩৩ ইউনিয়নে দলের সম্ভাব্য ১৭০ মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা কেন্দ্রে জমা দিয়েছে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ। তবে মনোনয়ন তালিকায় বিগত নির্বাচনের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর নাম রয়েছে। তালিকায় স্থান পেয়েছেন জেলা পরিষদে নির্বাচিত একাধিক সদস্যও। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশ মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
দলটির একাধিক জেলা নেতা বলেছেন, দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি স্পষ্ট করে বিদ্রোহী প্রার্থীদের তালিকায় স্থান না দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা কমিটিতেও বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। তারপরও তালিকায় বিদ্রোহীদের রাখা হয়েছে। আবার তথ্য গোপন করে জেলা পরিষদে নির্বাচিত অনেক সদস্যই আবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে চেয়েছেন। আজ শনিবার (১৩ মার্চ) ঢাকায় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আগামী ১৮ মার্চ, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১৯ মার্চ ও প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষদিন ২৪ মার্চ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম ধাপে খুলনার ৯টি উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলার ৩৩ ইউনিয়নে আগামী ১১ এপ্রিল ভোট গ্রহণ করা হবে। এ লক্ষে ১০ মার্চের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা আহ্বান করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। সেই হিসেবে জেলার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা ও দিঘলিয়া উপজেলার (নগরীর অন্তর্ভুক্ত যোগীপোল ও আড়ংঘাটা বাদে) ৩৩টি ইউনিয়নে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রে জমা দেয় জেলা আওয়ামী লীগ। দলের পক্ষে দপ্তর সম্পাদক এম এ রিয়াজ কচি ও কোষাধ্যক্ষ প্রকৌশলী মাহবুব আলম রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ সভানেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী) রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানের কাছে তালিকা হস্তান্তর করেন। ওই তালিকায় বিগত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী, জেলা পরিষদের সদস্যসহ ১৭০ জনের নাম রয়েছে। তবে সরাসরি দলীয় প্রার্থীতার আবেদন করার সুযোগ হওয়ায় এ সংখ্যা শেষ পর্যন্ত প্রায় দু’শতে গিয়ে ঠেকেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এম এ রিয়াজ কচি জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এবং জেলা নির্বাহীর কমিটির রেজুলেশনসহ একটি তালিকা কেন্দ্রে জমার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে তালিকায় কারা রয়েছেন- এ বিষয়ে কিছু জানাতে চাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা কালে কণ্ঠকে বলেন, ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নামের তালিকায় কেন্দ্র ও জেলা সিদ্ধান্ত মানা হয়নি। বিগত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন এমন ১৫/১৬ জনের নাম রাখা হয়েছে। বিদ্রোহীদের মধ্যে কয়রায় ৭/৮জন, পাইকগাছায় ৫জন ও দিঘলিয়া উপজেলায় কমপক্ষে একজন রয়েছেন। এমন কী পাইকগাছা উপজেলা নির্বাচনে প্রকাশ্যে নৌকা বিরোধীরা প্রস্তাবিত তালিকায় স্থান পেয়েছেন। স্থান পেয়েছে বিতর্কিত ব্যক্তিরা। আবার জেলা পরিষদের নির্বাচিত দিঘলিয়া, বাটিয়াঘাটা এলাকার একাধিক সদস্যও ওই তালিকায় স্থান পেয়েছেন, যাদের তথ্য গোপন করা হয়েছে। ফলে অনেক যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিৎ কুমার অধিকারী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিগত নির্বাচনে বিজয়ী ও বিজিত কয়েকজনের নাম রয়েছে। তবে তাদের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। মনোনয়ন শুধু বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।’
জেলা পরিষদ সদস্যদের তথ্য গোপন করে ফের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে কারো নতুন প্রার্থী হতে চাওয়া ঠিক হবে না। ওই ব্যক্তি মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলেও তার বর্তমান পদটি শূন্য হবে। এতে রাষ্ট্রীয় ব্যয় বাড়বে।