1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৭ পূর্বাহ্ন

নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়ার জ্বালানি তেল ঘুরপথে নিচ্ছে আমেরিকা!

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

গত ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ নামে আগ্রাসন শুরু করে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরাশক্তি রাশিয়া। এর জেরে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা দিলেও সেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই যাচ্ছে রাশিয়ার তেল।
এক্ষেত্রে সরাসরি রাশিয়া থেকে তেল কিনছে না আমেরিকা। রাশিয়া থেকে কেনা অপরিশোধিত তেল শোধন করে তা যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করছে ভারত। এই তেল আনা হচ্ছে ‘ছায়া ট্যাংকার’ বহর ব্যবহার করে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হয়ে ওঠে ভারত। জানা গেছে, শুধু গত বছরই রাশিয়ার কাছ থেকে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের অপরিশোধিত তেল কিনেছে ভারত। এরপর দেশে এনে পরিশোধন করার পর ১০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের তেল আমেরিকায় রফতানি করেছে নয়াদিল্লি।
ফিনল্যান্ডভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্স অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) তথ্য বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধের আগে রাশিয়া থেকে ভারত যে পরিমাণ তেল কিনত, যুদ্ধ শুরুর পর দেশটি থেকে ভারতের তেল কেনা ১৩ গুণ বেড়েছে।
সিআরইএর বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে রাশিয়ার তেল পরিশোধন করে করে ভারত যে জ্বালানি পণ্য তৈরি করেছে, তার বড় ক্রেতা ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে ১৩০ কোটি ডলারের জ্বালানি পণ্য আমদানি করেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলোর যে জোট রাশিয়ার তেলের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল, সেসব দেশেরও রাশিয়ার তেল থেকে তৈরি জ্বালানি পণ্য আমদানি বেড়েছে। সিআরইএর হিসাবে, ২০২৩ সালে জোটে থাকা অন্য দেশগুলোও ৯১০ কোটি ডলার মূল্যের এসব জ্বালানি পণ্য আমদানি করেছে। আগের বছরের চেয়ে যা ছিল ৪৪ শতাংশ বেশি।
রাশিয়ার তেল কেনার ওপর পশ্চিমারা যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার আওয়তায় পড়ে না ভারত। তবে জাহাজ চলাচলের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকলেও ভারত রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল আমদানির ক্ষেত্রে তথাকথিত ছায়া ট্যাংকার বহর ব্যবহার করেছে। কার কাছে তেল–বাণিজ্য হচ্ছে ও কীভাবে তেল পাঠানো হচ্ছে, সেটা গোপন রাখতে এই ছায়া ট্যাংকার বহর তৈরি করেছে রাশিয়া।
এ মাসের শুরুতে গ্রিসের গিথিও বন্দরে রাশিয়ার ছায়া ট্যাংকার বহরের দুটি ট্যাংকার দেখা গেছে। এর মধ্যে একটি ট্যাংকার ছিল অনেক বড় ও অন্যটি তুলনামূলক ছোট। তেলবাহী ট্যাংকার দুটি গ্রিসের বন্দরে নোঙর করা ছিল। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, এসব ট্যাংকারে থাকা তেল অন্য ট্যাংকারে স্থানান্তরের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল গ্রিসের ওই বন্দরকে।
জাহাজ চলাচল পর্যবেক্ষণ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান পোল স্টার গ্লোবাল। তাদের দেওয়া তথ্য বলছে, গ্রিসের বন্দরে নোঙর করে রাখা ওই দুটি ট্যাংকার এক সপ্তাহ আগে রাশিয়া থেকে তেল নিয়ে রওনা করে। ট্যাংকার দুটির মধ্যে একটি ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন। এই ট্যাংকারের নামে এর আগে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল। অন্য ট্যাংকারটিও যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক একটি নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল।
পোল স্টার গ্লোবালের ডেভিড তান্নেনবাউম বলেন, মাঝেমধ্যে আইনসিদ্ধ উপায়েই তেল এক ট্যাংকার থেকে অন্য ট্যাংকারে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর লক্ষ্যে এ ক্ষেত্রে অবৈধ একটি কৌশল অবলম্বন করা হয়। কারণ, এটা একধরনের খেলা। এ খেলা হয় যাতে এসব তেল কোথা থেকে এসেছে আর কারাই–বা কিনেছে, এ নিয়ে কর্তৃপক্ষ একটা ধন্দের মধ্যে পড়ে যায়।
বিশ্লেষকদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে গ্রিসের বন্দরে এমন ডজন ডজন ট্যাংকারে তেল স্থানান্তরের ঘটনা ঘটছে। গ্রিসের বন্দরে ট্যাংকার বদল হওয়ার পর সেই তেলবাহী ট্যাংকার সুয়েজ খাল হয়ে এশিয়ার দেশগুলোর বাজারে প্রবেশ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে রাশিয়ার তেল রফতানিতে সাহায্য করছে সন্দেহভাজন এমন ট্যাংকার ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ মাসের শুরুতে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় নতুন করে কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাশিয়ার কথিত এই ‘ছায়া বহর’ অচল করার লক্ষ্যে নতুন করে এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আরও কিছু পশ্চিমা দেশ একজোট হয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রাশিয়ার তেলের সর্বোচ্চ মূল্যসীমা বেঁধে দেয়। জোটের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি ব্যারেল ৬০ মার্কিন ডলারের বেশি দামে রাশিয়ার তেল কেনা যাবে না। এর চেয়ে বেশি দামে রাশিয়া যাতে তেল বিক্রি করতে না পারে, তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখার জন্য জোটভুক্ত দেশগুলো তাদের দেশীয় কোম্পানি ও বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেয়।
বেলজিয়ামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কেপলারের অপরিশোধিত তেলবিষয়ক গবেষণা শাখার প্রধান ভিক্টোরা কাতোনা বলেন, রাশিয়ার তেলের মূল্যসীমা বেঁধে দেওয়ার কারণেই মূলত ছায়া বহর তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। সরবরাহব্যবস্থা দীর্ঘ করতে এক ট্যাংকার থেকে আরেক ট্যাংকারে তেল স্থানান্তরও করা হচ্ছে। কারণ, এটা করলে রাশিয়ার প্রতি ব্যারেল তেলের প্রকৃত মূল্য কত সেটি নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে ওঠে।
তবে ভারত ও রাশিয়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে তেল–বাণিজ্য করেছে সরাসরি ও প্রকাশ্যে। উইন্ডওয়ার্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য বলছে, গত বছর তেল নিয়ে সরাসরি রাশিয়া থেকে ভারতে গেছে ৫৮৮টি ট্যাংকার।
এদিকে পোল স্টার গ্লোবালের তথ্যানুযায়ী, গত বছর রাশিয়া থেকে তেল নিয়ে গ্রিসের উপকূলে ট্যাংকার বদল করার দুই শতাধিক ঘটনা শনাক্ত করেছে তারা। প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এসব ট্যাংকারের গন্তব্য ছিল ভারত। সূত্র: সিএনএন

 

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি