পাঁচ শতাধিক বন্দির জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র একজন। স্বাভাবিক কোনো রোগবালাই হলে একজন চিকিৎসকই দেন চিকিৎসাসেবা।আর কোনো কারাবন্দি বেশি অসুস্থ হলে, তাকে নিয়ে নিতে হয় হাসপাতালে। চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে চিকিৎসক সংকটের পাশাপশি রয়েছে ওষুধের স্বল্পতাও। তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বল্পসংখ্যক বন্দির জন্য এ চিকিৎসাসেবা সন্তোষজনক। মেডিক্যাল অফিসারের পাশাপাশি কারাগারে সার্বক্ষণিক একজন ফার্মাসিস্ট দায়িত্ব পালন করেন। কোনো বন্দি বেশি অসুস্থ হলে তাকে নেওয়া হয় নিকটবর্তী হাসপাতালে। অসুস্থ বন্দিদের বিশেষ নজরে রাখা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে বন্দির সংখ্যা ৪৯১ জন। গড়ে মোট পাঁচ শতাধিক বন্দি এ কারাগারে থাকেন। এতো বন্দির জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র একজন। স্বাভাবিক রোগবালায়ে অনুমানের ওপর ভিত্তি করেই ওষুধ সেবন করে বাঁচতে হয় কারাবন্দিদের। রাতে বা ছুটির দিনে কেউ অসুস্থ হলে ফার্মাসিস্ট চিকিৎসা দেন। এছাড়া কারাগারে ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্র ছাড়া আর কোনো চিকিৎসা যন্ত্রপাতি নেই। রয়েছে ওষুধেরও সংকট। অথচ বয়স্ক বন্দিদের অনেকেই ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। তাদের নিয়মিত চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। কারাগার থেকে ওষুধ সরবরাহের কথা থাকলেও তা নিয়মিত সরবরাহ করা হয় না। জ্বর, ঠান্ডা, ব্যথা, দাঁদ, খোস-পাঁচড়ার ওষুধ ছাড়া জটিল কোনো রোগের ওষুধের ব্যবস্থা নেই। এতে বন্দিদের বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে খেতে হয়।
খুব প্রয়োজনে ডাকা হয় জেলা কারাগারে নিযুক্ত মেডিক্যাল অফিসার ডা. মশিউর রহমানকে। তিনি কারাগারে গিয়ে অসুস্থ বন্দিদের দেন চিকিৎসাসেবা। জেলা কারাগারে নিযুক্ত হলেও তিনি বেশিরভাগ সময় দায়িত্ব পালন করেন সদর হাসপাতালে। অতি প্রয়োজনে তিনি জেলা কারাগারে যান। এছাড়া মোহাম্মদ নাহিদ নামে একজন ফার্মাসিস্ট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে বন্দি এক কয়েদির স্বজন নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত তিন বছর ধরে তার ভাই কারাগারে রয়েছেন। তিনি উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের রোগী। মাঝে মধ্যেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অথচ সেখানে কোনো সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেই।
আলমডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা অপর এক বন্দির স্বজন জানান, শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ছাড়া জরুরি কোনো ওষুধের সরবরাহ নেই চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে। আর তাই তো ছেলের প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র বাইরে থেকে কিনে পৌঁছাতে হয়।
জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, সৌভাগ্যবশত গত এক বছরে জেলা কারাগারে বন্দি কোনো আসামির মৃত্যু ঘটেনি। তবে স্বাভাবিক রোগে আক্রান্ত হয়ে কারাগার এবং হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় শতাধিক বন্দি। স্বাভাবিক অসুস্থ রোগীকে কারাগারে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হয়। অতি গুরুতর রোগীকে কড়া প্রহরায় নেওয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শে সরকারি সরবরাহকৃত ওষুধ বন্দিদের দেওয়া হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারের জেলার শওকত হোসেন মিয়া বাংলানিউজকে জানান, জেলা কারাগারের জন্য একজন মেডিক্যাল কনসালট্যান্ট নিযুক্ত আছেন। এছাড়া সার্বক্ষণিক একজন ফার্মাসিস্ট নিয়োজিত আছেন। গত এক বছরে জেলখানায় কোনো বন্দির মৃত্যু হয়নি। দুই-একজন অসুস্থ হলে তাদের কারাগারে কিংবা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া রোগাক্রান্ত বন্দিদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয় এবং সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ওষুধ সুষ্ঠুভাবে সরবরাহ করা হয়।