রাজিয়া তূর্ণাঃ
ভুমিকম্প হলে ধসে পড়বে এমন আতংকে স্থানীয় এলাকাবাসী। নির্মানকালীন সময়ে ব্যবহার করা হয়েছে নিন্মমানের সামগ্রী। রড ও সিমেন্টর ব্যবহার করা হয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। মানা হয়নি বিল্ডিং কোড বা ইমারত নির্মান আইন।
অথচ বাইরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট এমন উচু উচু অন্তত ডজনখানেক বহুতল ভবন দাড়িয়ে আছে মানিকনগরের আনাচে-কানাচে। আর এই ভবন গুলো রাজউকের আইন-কানুন অনুযায়ী ভেঙ্গে ফেলার নিয়ম থাকলেও কোন নিয়মই মানছে না রাজউকের কর্মকর্তারা।
বরং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এই ভবন গুলো রক্ষার কাজে একধরনের যুদ্ধ ষোঘনা করে রেখেছে রাজউকের বড়বড় কর্মকর্তারা। সিবিএ নেতা বাশার তো ফ্ল্যাটই হাতিয়ে নিয়েছে। লিখিত অভিযোগ দিয়েও
কোন প্রতিকার মিলছে না। বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে কোন ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বোধ মনে করছেনা রাজউকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আর এসব ভবনের নির্মাতা ভরসা হাউজিংয়ের কর্নধার সাহেবআলী ওরফে শেখ সাহেব আলী। আওয়ামীলীগের বড় বড় নেতাদের দৃষ্টি আর্কষণ করতে খোলস পাল্টিয়ে নামের আগে ব্যবহার করেন ‘শেখ পদবী’। নাম নিয়ে ছলচাতুরীর মতোই ব্যবসায়িক অঙ্গনে মানুষকে ঠকানো সাহেবআলীর দুরন্ত সাহেবীপনা। কারন ইমারত নির্মান আইন বা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকের প্ল্যান অনুযায়ী বিল্ডিং নির্মান করলে সাহেবালীর লাভের পরিমান খুবই সীমিত।
আর লাভ সীমিত হলে জমি দখল ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য গুন্ডাপান্ডা লালন পালন খরচ, রাজউকের ঝড়ঝাপ্টা ঠেকাতে রাজউক কর্মকর্তাকে এবং অবৈধ গ্যাসের ব্যবহার চিরস্থায়ীভাবে ধরে রাখতে তিতাসের বড় সাইজের সিবিএ নেতাকে বিনা পয়সায় ফ্ল্যাট দেয়া সম্ভব হতো না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর মানিকনগরের বাসিন্দা সাহেব আলী ভরসা হাউজিং নামক ডেভেলপার কোম্পানির চেয়ারম্যান। পুজি খাটিয়ে অন্যের জমিতে বহুতল ভবন নির্মান করে ফ্ল্যাট বিক্রির মাধ্যমে লাভবান হওয়াই তার একমাত্র কাজ। পেশায় ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী হলেও তার মোবাইলে রয়েছে এমপি-মন্ত্রী, ডিসি-এসপি, ওসি, সাংবাদিক গুন্ডাপান্ডাদের ফোন নাম্বার। ঝামেলায় পড়লে এক ফোনেই সব পরিস্কার। আর ফোনে কাজ না হলে ঘুষের প্যাকেট তো আছেই।
একারনেই তিনি আইন-কানুনের কোন তোয়াক্কা করেন না। রাজধানীতে বহুতল ভবন নির্মান করতে হলে রাজউকের নিকট থেকে বার্ধ্যতামুলক প্ল্যান অর্থাৎ নকশার অনুমোদন নিতে হয়। আর রাজউক থেকে এই প্ল্যানের অনুমোদন নিতে আবেদনকারীকে কিছু গুরুত্বপূর্ন শর্তাবলী অনুসরন করতে হয়। ব্যবসায় লোকসান হওয়ার আশংকায় অনেকেই এসব শর্তাবলী পূরন না করে প্ল্যান ছাড়া, কখনো ভুয়া প্ল্যান দিয়ে আবার কখনো প্ল্যানের নিয়মভঙ্গ করে বহুতল ভবন নির্মান করেন।
এদের মধ্যে ভরষা হাউজিং অন্যতম। মানিকনগরে তাদের প্রায় ডজনের অধিক বহুতল ভবন নির্মান শেষে ফ্ল্যাট বিক্রির পাশাপাশি আরো একাধিক বহুতল ভবন নির্মানের কাজ চলমান রয়েছে। ভবন নির্মানের সময় রাজউকের প্ল্যান দৃশ্যমান জায়গায় টাঙ্গিয়ে রাখার নিয়ম থাকলেও এমন কোন দৃশ্য চোখে পড়ে নাই। তবে সাহেবালীকে এসব অনিয়ম থেকে বাচাঁতে সব সময়ই সজাগ থাকেন রাজউকের কর্মচারী সিবিএ নেতা আবুল বাশার শরীফ। অপরদিকে ভবনগুলোতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ স্থাপনের মুলহোতা তিতাসের সিবিএ নেতা ফারুক হোসেন। এরা দুজনেই সাহেবালীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন একটি করে ফ্ল্যাট।
সুত্র জানায়, রাজউকের প্ল্যান ছাড়া বিল্ডিং নির্মান করা সম্পূর্ন অবৈধ। আর একটি বিল্ডিংয়ের প্ল্যান পাশ করতে রাজউকে দিনের পর দিন অপেক্ষা করার পাশাপাশি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। তারপরেও নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। কিন্তু রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন একজন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে নিলেই তো সব সমস্যার সমাধান। কারন রাজউকের চেয়ারম্যান তো আর মাঠে গিয়ে তাকিয়ে থাকবে না।
একারনেই ভরষা হাউজিং কোম্পানীর চেয়ারম্যান সাহেবালী রাজউক কর্মচারী আবুল বাশার শরীফকে একটি ফ্ল্যাটের বিনিময়ে ম্যানেজ করে রাজউকের নিয়ম-নীতি পাশ কাটিয়ে ভবনগুলো নির্মানের মাধ্যমে অধিক মুনাফা অর্জন করেন। রাজউক আইনে ভবন নির্মানে প্রথম শর্ত হলো ভুমি ব্যবহারের ছাড়পত্র। এখানে নিদিষ্ট পরিমানের জমিতে নিদিষ্ট পরিমানের ভবন নির্মান করতে হবে। যেমন রাজউক আইনে জমির পরিমান ৩কাঠা হলে সর্বোচ্চ ৬তলা ভবন পর্যন্ত ভবন নির্মান করা যাবে। অথচ সাহেবালী নির্মান করেছেন ৯তলা থেকে ১১তলা। আবার জমির চারপাশে শতকরা ৩০ ভাগ খালি জায়গা ছেড়ে ভবন নির্মানের বিধি-বিধান থাকলেও সাহেবালীর ক্ষেত্রে এই নিয়মের চিহ্নও খোজে পাওয়া যায়নি। বরং অন্যের জমি দখল করারও রেকর্ড রয়েছে।
তবে এসব অনিয়মের লিখিত অভিযোগ পেয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাজউক। যেখানে জলজ্যান্ত রাজউকের কর্মকর্তা ফ্ল্যাট মালিক সেখানে কার বাবার সাধ্য আছে ব্যবস্থা নেয়ার। একারনে রাজউক থেকে অবৈধ ভবন ঘোষিত হওয়ার পরেও বহাল তবিয়তে দাড়িয়ে আছে সাহেবালীর ভরসা হাউজিং।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মুগদা থানাধীন মানিকনগর পুকুরপাড় সংলগ্ন ৩৪/এ হোল্ডিংয়ে নির্মিত ভরসা নাছিরুন নেছা টাওয়ার। ১০তলা বিশিষ্ট এই ভবনটি রংচংয়ে বাইরে থেকে দেখতে খুবই সুন্দর। তবে বিল্ডিং নির্মান আইনের পুরোটাই লঙ্গণ করা হয়েছে। রাজউকের নকশা অনুমোদন থাকলেও তা মানা হয়নি। জমির অনুপাতে ৬ তলার অনুমোদন থাকলেও নির্মান করা হয়েছে ১০তলা। ভবনের চারিপাশে শতকরা ৩০ ভাগ জমি খোলামেলা রেখে ভবন নির্মানে নকশা অনুমোদন বা ভুমি ব্যবহারের ছাড়পত্র থাকলেও তা পালনের কোন চিহ্ন চোখে পড়ে নাই। এছাড়া রাজউক অনুমোদিত নকশায় উল্লেখ না থাকলেও ভবনের নিচতলায় নির্মান করা হয়েছে মার্কেট। অর্থাৎ আবাসিক ভবনে বানিজ্যিক কার্যক্রম।
যা ইমারত নির্মান আইনে সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। কিন্তু ভরসার রক্ষাকবচ রাজউকের কর্মচারী বাশারের হাতের জাদুতেই নির্বিগ্নে হয়েছে এসব কর্মকান্ড। ফ্ল্যাট বিক্রির কাজও শেষের দিকে। আইন ভঙ্গ করে ফ্ল্যাট ব্যবসা চালাতে পারলে অল্প সময়েই হওয়া যায় কোটিপতি। সাহেবালী ওরফে শেখ সাহেব আলী ক্ষেত্রেও ঘটেছে এমনটাই। সাহেবালী এখন কোটিপতি। হাজার টাকার নোটের বান্ডিল উড়িয়ে মারেন জলসা ঘরে নর্তকীর শরীরে।
সারাক্ষণ গুন্ডাপান্ডায় ঘেরা থাকে তার চারিপাশ। সাহেবালীর গাড়ির ড্রাইভার মানিকনগর এলাকার গুন্ডা নাম্বার ওয়ান। বস সাহেবালীকে কেউ কিছু বললে তার উপর গাড়িচাপা দেয়ার ভয়ভীতি দেখান এবং পান থেকে চুন খসলেই মারামারি বাধিয়ে দেন। সাংবাদিক পাইলে তো কথাই নাই। মাদকখোর, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী পোলাপানের সমন্বয়ে একটি বাহিনীকে মাদক, নারী ও টাকা দিয়ে লালন পালন করেন এই সাহেবালী ওরফে সাহেব আলী।
ভরসা হাউজিংয়ের কর্নধার সাহেবালী ওরফে শেখ সাহেব আলী বলেন, নিউজ টিউজ করে কোন লাভ হবে না, রাজউককে ম্যানেজ করে রেখেছি। বিস্তারিত আসছে পরের পর্বে।