1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১০ অপরাহ্ন

ঈদকে সামনে রেখে যাত্রাবাড়ীতে চাঁদাবাজির রমরমা বাণিজ্য

রিপোর্টার
  • আপডেট : রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪

এম রাসেল সরকার:
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে চাঁদাবাজির মহোৎস চলছে। ফুটপাত, রাস্তা, পাইকারি আড়ত, বাস কাউন্টার, টেম্পু, লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশা, এমনকি ফ্লাইওভারের নীচের রাস্তায় পার্কিয়ের সুবাদে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় এ চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ী, স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবহন মালিক ও যাত্রীরা।

এ নিয়ে ভয়ে কেউই মুখ খোলার সাহস করে না। তবে কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ভুক্তভোগিরা একটি লিখিত আবেদন দিয়েছেন। সেই আবেদনে প্রায় দুশ’ ভুক্তভোগি স্বাক্ষর করেছেন। আবেদনের অনুলিফি দেয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারসহ র্যাব-১০ এর অধিনায়কের কাছে। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, তারপরেও চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। বরং স্থানীয় পট পরিবর্তনের পর চাঁদাবাজরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কমিটিতে নাম লিখিয়ে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলের ছত্রচ্ছায়ায় সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, যাত্রাবাড়ীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাস স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা করে আসছে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।

জানা গেছে, গত বছরের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী বরবারে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন যাত্রাবাড়ী এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা। ওই অভিযোগে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও ক্যাসিনো সম্রাটের অন্যতম সহযোগী ক্যাসেট বাবুল হত্যা মামলার আসামী আসাদ শেখ, সম্রাট ওরফে ডাবওয়ালা সম্রাট, বাবু ওরফে হোন্ডা বাবু, আরিফ ওরফে হোন্ডা আরিফ, হৃদয়, জালাল ওরফে পিটা জালাল, রাসেল, করিম ড্রাইভার, আওলাদ, সাইদুল, মবিল শামীম, টিটু ও তানজিল দীর্ঘ দিন থেকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছে। তারা যাত্রাবাড়ীর ইলিশ পরিবহন, সিরাজদিখান পরিবহন, গ্রেট বিক্রমপুর, আপন পরিবহন, গোধূলী পরিবহন, সোনারবাংলা পরিবহন, ডিএম পরিবহনের কাউন্টার থেকে চাঁদা তোলে। এছাড়া তৃষা পাম্পের সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে যাত্রাবাড়ী টিএন্ডটি অফিস সংলগ্ন দোকানপাট, সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড ও বিএনপি নেতা বরকত উল্লাহ ভুলু পাম্পের সামনের ফুটপাত ও রিকশা ভ্যান স্ট্যান্ড, পূবালী মাছ বাজার থেকে সুফিয়া প্লাজা পর্যন্ত ভ্যান, পিকআপ, রিকশা পার্কিং, ফ্লাইওভারের নিচে বরফের দোকান থেকে চাঁদা তোলে। যাত্রাবাড়ীর কাজী টাওয়ার থেকে নুরু হাজী মার্কেট, সামাদ সুপার মার্কেট, ভায়া খানকা শরীফ পর্যন্ত ভ্যান গাড়ি ও চৌকির দোকান, যাত্রাবাড়ী থেকে জুরাইন, পোস্তগোলা লেগুনা পরিবহন, ৮নং বাস ও তুরাগ বাসের অবৈধ পার্কিং থেকে দৈনিক মোটা অংকের চাঁদা তোলে ওই বাহিনীর সদস্যরা। এমনকি স্থানীয় কাউন্সিলরের ছত্রচ্ছায়ায় মাদক ব্যবসা, গুম, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত রয়েছে তারা। তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কিন্তু ভয়ে কেউ কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করছেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা ও শহীদ ফারুক সড়কের ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে বসানো হয়েছে দুই শতাধিক দোকান। এসব দোকানের হকারদের কাছে থেকে জোর করে চাঁদা তোলে সোনা মিয়া ও তোরাব আলী। লাইনম্যান নামধারী এদুজন সম্রাটেরলোক বলে হকাররা জানায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন হকার বলেন, দোকানপ্রতি ৩শ’ থেকে ৬শ’ টাকা করে চাঁদা তোলে সোনা মিয়া ও তোরাব আলী।

অন্যদিকে, যাত্রাবাড়ীর পাইকারী আড়ত থেকে চাঁদা তোলে আবু। দোকানপ্রতি প্রকারভেদে ৮শ’ থেকে ১২শ’ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। প্রতিদিন শুধুমাত্র আড়ত থেকে চাঁদা তোলা হয় প্রায় এক লাখ টাকা। এদিকে, যাত্রাবাড়ীর টেম্পু স্ট্যান্ড ও চারটি রুটে চলাচলকারী লেগুনা থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। বর্তমান আইজিপি চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার পর পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধ হলেও যাত্রাবাড়ী তার কোনো নজির নেই। বরং চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ গাড়ির চালক ও মালিকরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেম্পু স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা তোলে হোন্ডা বাবু ও সাইদুল। যাত্রাবাড়ী- পোস্তগোলা রুটে চলাচল করে প্রায় দেড়শ লেগুনা। এসব লেগুনা প্রতি ২২০ টাকা করে চাঁদা তোলে হোন্ডা বাবু ও সাইদুল। আর যাত্রাবাড়ী-চিটাগাং রোডে চলাচলকারী তিস শতাধিক লেগুনা থেকে গাড়িপ্রতি ৫শ’ টাকা করে চাঁদা তোলে কামরুল ইসলাম পলাশ। যাত্রাবাড়ী-রাণিমহল রুটে চলাচল করে শতাধিক লেগুনা। এসব গাড়িপ্রতি ২৩০ টাকা করে চাঁদা তোলে বাচ্চুর লোকজন। আর যাত্রাবাড়ী-সদরঘাট রুটে চলাচলকারী প্রায় চারশ’ লেগুনা থেকে গাড়িপ্রতি ৩৮০ টাকা করে চাঁদা তোলে সোহরাব মহাজন। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ীর ইলিশ কাউন্টার থেকে মাসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ডিএম পরিবহনের কাউন্টার থেকে মাসে ৭০ হাজার টাকা, গুণগুণ পরিবহনের কাউন্টার থেকে মাসে ৪৫ হাজার টাকা এবং সিরাজদিখান পরিবহনের কাউন্টার থেকে মাসে ৩০ হাজার টাকা করে চাঁদা তোলে জালাল ও খোকন। এরা দুজনেই সম্রাটের সহযোগী।

এদিকে, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নীচে ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক দখল করে দিনে রাতে পার্কিং হিসাবে ভাড়া দেয়া হয়। এই পার্কিংবাবদ গাড়িপ্রতি ১শ’ টাকা করে চাঁদা তোলে সম্রাটের লোকজন। ভুক্তভোগিরা জানান, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে ফ্লাইওভারের নীচ দিয়ে ধোলাইপাড় সম্রাটের কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত মহাসড়কের বেশিরভাগ অংশ দখল করে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। প্রতিদিন প্রায় তিনশ’ গাড়ি থেকে একশ’ টাকা করে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা তোলে সম্রাটের লোকজন। এসব গাড়ির কারণে ফ্লাইওভারের নীচের রাস্তা দিয়ে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। পিক আওয়ারে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশের সেদিকে কোনো নজর নেই। ভুক্তভোগি কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, স্থানীয় পটপরিবর্তনের আগেও চাঁদাবাজি ছিল। কিন্তু এখন যা শুরু হয়েছে তা সীমাহীন। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে। ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ ব্যাপারে সম্রাটের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাঁদার টাকা আমি একা খাই না। আমি একাও চাঁদাবাজি করি না। টাকা কোথায় যায় তা সবাই জানে। শুধু শুধু আমার একার দোষ দিয়ে লাভ কী? তিনি এ বিষয়ে শামীমের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি বলেন, অভিযোগের বিষয়টি স্মরণ নেই। তবে সস্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। এছাড়া বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের ডিসি বলেন, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমান পেলে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি