1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ অপরাহ্ন

পিজিসিবি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল ও তার স্ত্রীর সম্পদের খোঁজে দুদক

আবু তাহের বাপ্পা
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন: পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশ লি:। দেশের স্বনামধন্য একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানেরই একজন উপসহকারী প্রকৌশলী মো: সোহেল। তিনি স্কাডা এন্ড মেইনটেনেন্স ডিভিশন এ কর্মরত। বর্তমানে তিনি দশম গ্রেডের একজন কর্মকর্তাো। তার স্ত্রী তানিয়া সুলতানা কোটি কোটি টাকার ব্যবসায়ী তাদের সম্পদের খোজে দুদক।
দশম গ্রেডের বেতনের একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: সোহেলে এর নিজ নামে ঢাকার সাভারে ৭নং ওয়ার্ড, আইচা নোয়াদ্দা শাহীবাগ এলাকায়, ২৯/১২ নং প্লট নিজ নামে ৮ তলা ভবন । যার বাজার মূল্য ২০ কোটি টাকা। বসবাস করেন ৩ কোটি মূল্যের ফ্লাটে । এছাড়া অতি সম্প্রতি পূর্ব রাজাবাজারে একটি স্বনামধন্য আবাসন কোম্পানী হতে স্ত্রীর নামে ক্রয় করেছেন আরেকটি আড়াই থেকে ৩ কোটি টাকা মূল্যের ফ্লাট। যা এখনো নির্মানাধীন। আফতাব নগরে এল ব্লকে রয়েছে তার আড়াই কাঠা মুল্যের আরো একটি প্লট। ৩ জন মিলে সাড়ে ৭ কাঠার উপর তৈরী হচ্ছে অত্যাধুনিক সুরম্য অট্টালিকা। উক্ত প্লটটির বর্তমান বাজার মূল্য আড়াই থেকে ৩ কোটি টাকা। নিজস্ব অর্থায়নে তৈরী হচ্ছে বিল্ডিংটি। বিল্ডিংটি নির্মানে ব্যয় হবে নুন্যতম ২০ কোটি টাকা। ৩ ভাগের ১ ভাগ হিসেব করলেও তার ৭ কোটি টাকা লাগবে। ইতোমধ্যে ৪র্থ তলার ছাদ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও ঢাকা সেনানিবাসের পাশে কালসীতে ক্রয় করেছে ২ টি ফ্ল্যাট। যার বাজার মূল্য ৩ কোটি টাকা।
১টি বায়না দলিল এর সূত্র ধরে দেখা গেছে, গাজীপুর মৌজায় ১০ তলা ১টি বাড়ী কাজ চলমান। উক্ত বিল্ডিংটি তার পিতা আবু তাহের ও মা মর্জিনা খাতুনের এর সাথে যৌথ ভাবে নির্মিত। উক্ত বায়না নামায় দেখা যায়, মোট ১৯ জন মিলে উক্ত বিল্ডিংটি যৌথভাবে নির্মিত হচ্ছে। সেখানে ১টি ফ্ল্যাট বিক্রয়ে দাতা হিসেবে তানিয়া সুলতানার নাম রয়েছে। উক্ত বায়না নামাটি ২০২১ সালে সৃজনকৃত। উক্ত ঠিকানায়ও রয়েছে তানিয়া সুলতানার সম্পদ। উক্ত বায়নাচুক্তি নামায় স্বাক্ষী হিসেবে (১) আবদুল্লাহ আল-মামুন (২) এ, কে, এম আবু নাসের ও (৩) অসীম কুমার তিন জনই মো: সোহেল এর নিকটতম বন্ধু-বান্ধব ও ব্যবসায়িক অংশীদার।এরা প্রত্যেকেই সরকারী চাকুরীরত। এদের প্রত্যেকের রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ।তার মধ্যে এ, কে এম আবু নাসের, অসীম কুমার ও সোহেল একই অফিসে কর্মরত। সোহেলের সমস্ত ব্যক্তিগত কাজকর্ম এবং নামের সম্পাদন করে দেয় তারই কলিগ কাম বাল্যবন্ধু নাসের। যে কিনা তার সাথে একই ফ্লোরে বসে অফিস করে। এই অফিসের একাধিক সূত্র গনমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ফার্মগেইট খামারে বাড়ী, কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরে রয়েছে সোহেল এর একচ্ছত্র আধিপত্য। স্থানীয় প্রভাবশালী একজন নেতার নাম ভাঙ্গিঁয়ে তিনি চলেন। খামারবাড়ী ও আশে-পাশে ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বর্তমানে তার প্রায় ৬০-৭০ কোটি টাকার ঠিকাদারী কাজ চলমান। তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ প্রায় শতাধিক চাকুরী প্রত্যাশীদের নিকট হতে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এমন অনেক অভিযোগের তথ্য প্রমান গণমাধ্যমের হাতে রয়েছে। তিনি যা কিছুই করেন না কেন; সমস্ত সম্পত্তি করেছেন তার স্ত্রী গৃহিণী তানিয়া সুলতানার নামে । আর তানিয়া সুলতানার এ সম্পদের উৎস কি? কত টাকা তিনি আয়কর প্রদান করেন তা খতিয়ে দেখলে সমস্ত থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে। আমাদের অনুসন্ধানে তা উঠে এসেছে।
এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন মহাপরিচালক দৈনিক জাতীয় অর্থনীতিকে বলেন, একজন সরকারী চাকুরীজীবির স্ত্রী কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দুদক দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে চলে”। তদন্ত চলছে তথ্য ও প্রমান আমাদের কাছে আসলে অবশ্যই আমরা দুদক আইনে ব্যবস্থা গ্রহন করব। তিনি আরও বলেন, সরকার নির্বাচনী ইশতেহারেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারী প্রদান করেছেন। সুতরাং, দুদকও সেই নীতিতেই কাজ করবে।
ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিজে কিংবা তার স্ত্রীর নামে যদি জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জন করে থাকেন তাহলে দুর্নীতি দমন আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে দুর্নীতিবাজরা আরও উৎসাহিত হবে।
সোহেল বসবাস করেন রাজধানী ঢাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভিজাত এলাকা ইন্দিরা রোডের ২১০০ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাটে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা । চলাচলের জন্য রয়েছে ২টি বিলাস বহুল গাড়ী। যেখানে তারই প্রতিষ্ঠানের উদ্ধর্তন কর্মকর্তার দামী গাড়িতে চড়ার সুযোগ পান না সেখানে তিনি নিজে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হলেও চলাচল করেন বিলাস বহুল নিউ ব্রান্ডের করোলা ক্রস এসইউভিতে (SUV) ব্রান্ডের গাড়িতে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৬০ লাখ টাকা । তার স্ত্রী তানিয়া সুলতানা (গৃহিনী)। নিজে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হলেও তার স্ত্রী তানিয়া সুলতানা কোটি কোটি টাকার ব্যবসায়ী। ইন্দিরা রোড ফার্মগেইট এ ১টি সাইন বোর্ডেই রয়েছে তার স্ত্রীর নামে ৩টি ঠিকাদারী লাইসেন্স। যা যথাক্রমে: (১) মেসার্স এসএমসি এন্টারপ্রাইজ যার প্রোপাইটার তানিয়া সুলতানা। (২) কম্পিউটার সলিউশন যার প্রোপাইটার মূলত মো: সোহেল (৩) মেসার্স তাহমিদ এন্টারপ্রাইজ যার প্রোপাইটার তার শ্যালক । মূলত: সোহেল ও তার নির্দিষ্ট একটি ঠিকাদার গ্রুপ মিলে ঠিকাদারী ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে থাকেন। সরকারী চাকরী বিধি অনুযায়ী কোন সরকারী কর্মকর্তা অন্য কোন ব্যবসার সাথে সরকারের অনুমতি ব্যতীত ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবসার সাথে জড়িত হতে পারেন না। সেখানে তিনি সরকারী চাকুরীরত অবস্থায় কি করে এতগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হলেন ? তিনি ও তার পরিবার কি পরিমান সম্পদের মালিক হতে পারে তা অনুমেয়। কিন্তু মো: সোহেল এর ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম। বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে তার ঠিকাদারী ব্যবসা ছাড়াও তিনি সাধারন জনগনের সাথে চাকুরী দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

প্রতিদিন সন্ধ্যার পর তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় বসে নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের আড্ডা। দেশের ডাক সাইটের অনেক নামী-দামী ব্যক্তিদের আগমন ঘটে তাদের ব্যবসায়িক আড্ডায়। একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলীর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হওয়ার গল্পটা অনেকটা চমকপ্রদ। কাগজে কলমে তার সমস্ত সম্পত্তির মালিক তার স্ত্রী তানিয়া সুলতানা। তানিয়া সুলতানার কাগজপত্র টিআইএন জাতীয় পরিচয় পত্র ঘেঁটে দেখা গেছে যে তিনি পেশায় একজন গৃহিনী। তানিয়া সুলতানা পিতা মো: আবু তাহের, মাতা মর্জিনা খানম, স্বামীর নাম মো: সোহেল, জন্ম তারিখ ০২/০১/৮৯ ধর্ম ইসলাম, পেশা গৃহিনী, জাতীয়তা বাংলাদেশী। জাতীয় পরিচয় পত্র নং- ১৯৮৯৩৩৫৩০৯৮২৩০৫২৫ টি,আই,এন-১৪৮৮১১৯৮২১১৭। তানিয়া সুলতানার জাতীয় পরিচয়পত্র সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তার অঢেল সম্পত্তির তথ্য । মো: সোহেল এর স্থায়ী ঠিকানা ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানার ফজলগঞ্জ এলাকার আলীগাঁও গ্রামের আব্দুল হক মাস্টারবাড়ীতে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তানিয়া সুলতানার পিতা আবু তাহের বিওএফ, গাজীপুর সেনানিবাস এলাকা গাজীপুর। সেনাবাহিনীতে কর্মরত পিতার সন্তানের এত সম্পদ হওয়ার কথা না। তা হলে তার সম্পদের উৎস কোথায়?
পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশ লি: এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ,কে,এম গাউছ মহীউদ্দিন আহম্মেদ এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে তো কোন লোকাল কেনাকাটা হয় না। তাহলে, একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী কিভাবে এত সম্পদের মালিক হন তা আমার বোধগম্য নয়। এর চেয়ে বেশী কিছু আমি বলতে পারবো না। এরপরও যদি আপনাদের কিছু জানার থাকে তাহলে এইচ আর ডিভিশনে যোগাযোগ করতে পারেন।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি