জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে বেশ নাম-ডাক ছড়িয়েছিলেন তিনি। মার্কিন ভূ-তত্ত্ববিদ এবং গ্রহ বিজ্ঞানের অন্যতম এক প্রতিষ্ঠাতা ইউজিন মেরেল শোমেকার। তিনিই পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি, যাকে সমাহিত করা হয় চাঁদের মাটিতে।
১৯২৮ সালের ২৮ এপ্রিল আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করেন ইউজিন মেরেলা শোমেকার। ১৯৯৪ সালে এ জ্যোতির্বিজ্ঞানী তার স্ত্রী ক্যারোলিন এস শোমেকার ওডেভিড এইচ লেভির সঙ্গে ‘কোমেট শোমেকার-লেভি ৯’ ধূমকেতু আবিষ্কার করেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, ৫১ বছর বয়সে জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়েও বিখ্যাত হয়ে যান ইউজিন।
তিনি তার শেষ জীবন মহাকাশ এবং পৃথিবীর প্রাকৃতিক উপগ্রহের উপর গবেষণা করে কাটিয়ে দিয়েছেন। চাঁদ নিয়ে ইউজিনের কৌতূহলের শেষ ছিল না। সেখানকার মাটি-পাথর সবকিছু নিয়েই গবেষণা চালিয়েছেন তিনি। তার ইচ্ছা ছিল চাঁদের মাটিতে পা রাখবেন।
১৯৬০ সাল থেকে নাসার সঙ্গে কাজ শুরু করেন ইউজিন। অ্যাপোলো মিশনসহ নাসার বিভিন্ন প্রকল্পের সাফল্যের জন্য তার সমস্ত জ্ঞান উজার করে দিয়েছিলেন। বিভিন্ন গবেষণার পাশাপাশি নভোচারীদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া সব কাজ একাই সামলাচ্ছিলেন নিজ হাতে।
ইউজিন আমেরিকান নভোচারীদের প্রশিক্ষণেও জড়িত ছিলেন। তিনি নিজেও অ্যাপোলো মুনের একটি ফ্লাইটের সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন। তবে অ্যাডিসন (অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির একটি ব্যাধি) রোগ থাকার কারণে সনাক্তকরণে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। ইউজিনের চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যায়।
এরপর তিনি নভোচারীদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। তিনি প্রথম দিকে অ্যাপোলো মিশন- অ্যাপোলো ৮ এবং অ্যাপোলো ১১ মিশনের সময় সিবিএস নিউজ টেলিভিশন ভাষ্যকার ছিলেন। ওয়াল্টার ক্রোনকাইটের সঙ্গে উপস্থিত থেকে ইউজিন বিশেষ এ ফ্লাইটগুলোর লাইভ কভারেজ দেন।
১৯৬৯ সালে পৃথিবীর কক্ষপথে অতিক্রমকারী গ্রহাণু নিয়ে একটি পদ্ধতিগত অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন ইউজিন। যার ফলশ্রুতিতে অ্যাপোলোসহ বেশ কয়েকটি গ্রহাণুর আবিষ্কার ঘটে ইউজিনের হাত ধরে। ১৯৭৫ সালে ইউজিন জ্যেতির্বিজ্ঞানে অবদান রাখায় ফ্রাঙ্কলিন ইনস্টিটিউট থেকে তিনি ‘জন প্রাইস ওয়েদারিল’ মেডেলপ্রাপ্ত হন।
১৯৯৭ সালের ১৮ জুলাই এক গাড়ি দুর্ঘটনার নিহত হন ইউজিন। তার স্ত্রীও গুরুতর আহত হন। ইউজিনের চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন কখনো পূরণ হয়নি! এ বিষয়ে তার সহকর্মীরা দুঃখবোধ করেন। অবশেষে তারা সিদ্ধান্ত নেন, ইউজিনের মৃতদেহ চাঁদের মাটিতে সমাহিত করা হবে।
নাসায় প্রশংসনীয় সব অবদান রাখায় ইউজিনের প্রতি সম্মান জানাতে তাকে চাঁদে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে লাশ নিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য হবে বলে, আগে তাকে পোড়ানো হয়। এরপর তার পোড়ানো ছাই নিয়ে যাওয়া হয় চাঁদে।
১৯৯৮ সালের জানুয়ারি মাসে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ‘লন্ডার প্রসপেক্টর’ নামক একটি রকেট ইউজিনের মৃতদেহের ছাই বহন করে ছুটতে শুরু করে। ইউজিন শোমেকারের দেহের ছাই সেলেস্টিস নামের একটি সংস্থা কর্তৃক উত্পাদিত বিশেষ পলিকার্বোনেট ক্যাপসুলের মধ্যে রাখা ছিল। যা মৃত মানুষকে মহাশূন্যে পাঠানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী ছিল।
এ ক্যাপসুলের বাইরের অংশে তার নাম, জন্ম ও মৃত্যু তারিখ লেখা ছিল। লুনার প্রসপেক্টর রকেটটি ১৯৯৯ সালের ৩১ জুলাই চাঁদে পৌঁছায়। এরপর নভোচারী সেখানে পৌঁছে ইউজিন মেরেল শোমেকারের মৃতদেহের ছাঁই ভরা ক্যাপসুলটিকে চাঁদের মাটিতে সমাহিত করে। এভাবেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীকে চাঁদে কবর দেওয়া হয়।