পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সঠিক তথ্য দিতে পারেনি বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে নির্বাচনের আগে অনেকটা অগ্রগতি হলেও নানা কারণে থেমে যায়। সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে কমিটির বৈঠকে জানতে চাওয়া হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) ন্যাম ভবনে নিজ বাসায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কত দূর এগিয়েছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা বেশ ভালো অবস্থানে গিয়েছিলাম। নির্বাচনের আগে এক পর্যায়ে বলেছিল একটা গ্রুপ নিবে ১২০০ বা তার কিছু বেশি। ছোট পরিসরে শুরু হবে। সে কারণে তারা আমাদের দেশে কয়েকবার এসেছে। আমাদের দেশ থেকেও গিয়েছেন। তারপর কিছু বিদেশী প্রতিষ্ঠান বলল যে রাখাইন এলাকাগুলোয় অনিশ্চয়তা আছে। তারা তখন বাঁধা দিল। এর সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তারাও ওই কথায় সায় দিলেন। ফলে সে কাজ আর হয়নি। এখন অন্যরকম অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দ্বিপাক্ষিকভাবে বিষয়টি সমাধানের জন্য পদ্ধতিটি চালু করেছিলাম। সেটি এখনো চলমান আছে। কিন্তু কত দূর অগ্রগতি হয়েছে এ মুহূর্তে আমি জানি না। এ বিষয়ে আমরা জিজ্ঞাসা করেছি, তারা কেউ সদুত্তর দিতে পারেননি।
বিদেশী মিশনগুলোয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের সেবার মান বাড়ানোর উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে বিদেশে প্রায়ই প্রবাসীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ পাই। আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সব মিশনে একটি অভিযোগ বক্স তৈরি করেছিলাম। তারপর হট লাইন চালু করেছিলাম। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন মিশনে সাধারণ মানুষ যখন ফোন করে তারা যথেষ্ট সাড়া পান না। আমি থাকতে সব মিশন দেখভালের জন্য একজন সিনিয়র অ্যাম্বাসেডরকে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব অল মিশনস বানিয়েছিলাম। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব অল মিশনস প্রতি মাসে প্রধান মিশনগুলোয় মানুষ কতগুলো অভিযোগ দিয়েছে, কতগুলোর সুরাহা হয়েছে সেগুলো সংসদীয় কমিটিকে জানাবেন। তাতে মনে করি আমাদের সেবার মান আরো ভালো হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন এটি ভালো।
প্রবাসে জেলে থাকা বাংলাদেশীদের তথ্যের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, বহু দেশে বাংলাদেশীরা জেলে আটক আছে। তারা মাসের পর মাস জেলে আটক রয়েছে। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছি কোন কোন দেশে কতজন প্রবাসী জেলে আটক আছে তার হিসাব নেন এবং সেগুলো আমাদের দেবেন। এদের বের করে নিয়ে আসার জন্য কী কী কাজ করা হয়েছে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
মোমেন বলেন, গত নির্বাচনের আগে মানবাধিকার ইস্যুতে খুব হইচই হতে দেখেছি। আগামীতেও হয়তো এসব ইস্যুতে হইচইয়ের সম্ভাবনা আছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট উইং করার প্রয়োজন আছে কিনা সেটি যাচাই বাছাইয়ের প্রস্তাব দিয়েছি। উনারা যাচাই বাছাই করে এবং অন্যান্য দেশে এ ধরণের উইং আছে কিনা সেটি জানাবেন।
সোমালিয়ায় অপহরণ হওয়া নাবিকদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা জানতে চেয়েছি নাবিকদের অবস্থা কেমন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে। সোমালিয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত আলাপ হয়নি, কিন্তু উনি বলেছেন আলোচনা ইতিবাচক।
প্রবাসী মিশনগুলোয় স্থায়ী সেলফোনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে স্থায়ী কমিটির সভাপতি বলেন, আমাদের অনেক দেশে মিশনে অ্যাম্বাসেডর সাহেবের টেলিফোন আছে। উনি ওখান থেকে ট্রান্সফার হয়ে গেলে টেলিফোন সঙ্গে করে নিয়ে যান। ফলে অনেকে টেলিফোনে পান না। এজন্য আমরা বলেছি সব মিশনে ইউনিক সেলফোন থাকতে হবে। মিশনের অ্যাম্বাসেডরের ইউনিক সেলফোন থাকলে যোগাযোগ করা সহজ হবে।
মোমেন উল্লেখ করেন, গাজা এবং প্যালেস্টাইনের জনগণের জন্য শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী যে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন সেজন্য আমরা প্রশংসা করি, কৃতজ্ঞতা জানাই।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি শিগগিরই কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম পরিদর্শনে যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মোমেন বলেন, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু ইকোনোমিক জোন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেলপথ এবং রোহিঙ্গাদের জীবন মান কেমন চলছে সেগুলো দেখার জন্য সংসদীয় কমিটির সদস্যরা শিগগিরই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সফর করবেন। এটি আগেই ঠিক করা ছিল। আমরা ঠিক করেছিলাম যে প্রথম বৈঠক কক্সবাজারে করব। তখন স্পিকার এটিকে নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারিখ পরিবর্তনজনিত কারণে আর হয়নি।
তিনি বলেন, গত নির্বাচনের আগে দেখেছি স্টেকহোল্ডার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর না। সেজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দিয়েছি যে গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার দেশের আইনপ্রনেতাদের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করা। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে অন্যান্য দেশের কমিটির সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপন করা। আর বিদেশী মেহমান এলে তাদের নিয়ে সংসদীয় কমিটির সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থার কথা বলেছি।
তিনি বলেন, আমাদের মিশনগুলোয় বিভিন্ন উইং রয়েছে- যেমন লেবার উইং, ট্রেড উইং, ইকোনমিক উইং। কিন্তু তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আগামীতে যারা বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যাবেন আমরা তাদের শুনানির ব্যবস্থা করব। গণ শুনানি হলে জবাবদিহি বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী চান জবাবদিহির সরকার। আমরা আগামীতে এটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করব।