পাঁচ কোটি শিশুকে টাইফয়েড টিকা দেয়া শুরু রোববার

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাসব্যাপী টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শিশুদের টাইফয়েড সংক্রমণজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুহার বহুলাংশে কমাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

রোববার (১২ অক্টোবর) দেশজুড়ে শুরু হওয়া এ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করবে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)। ১৯৭৯ সাল থেকে প্রায় ৪৬ বছর ধরে শিশু, কিশোরী এবং সন্তান ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নারীদের টিকা দিয়ে প্রতিরোধযোগ্য বিভিন্ন সংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে দেশজুড়ে কর্মসূচিটি পরিচালিত হচ্ছে।

এবারের ক্যাম্পেইনে দেশের প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে অত্যন্ত কার্যকর এক ডোজ টাইফয়েড টিকা বিনামূল্যে দেয়া হবে। প্রাক-প্রাথমিক (প্লে, নার্সারি, কিন্ডারগারটেন) থেকে ৯ম শ্রেণি/ সমমান (মাদ্রাসা, ইংরেজি মিডিয়াম) পর্যন্ত অধ্যয়নরত সব ছাত্র-ছাত্রীকে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত নয় মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সব শিশুকে কমিউনিটি পর্যায়ে ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে এই টিকা নিতে হবে। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এবং বিভিন্ন বেসরকারি এনজিওর সহযোগিতায় সুবিধাবঞ্চিত ও পথশিশু এবং বেদেপল্লী, চাবাগান, এতিমখানা, শিশু/ কিশোর/কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র ও যৌনপল্লীতে থাকা শিশুদের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় টাইফয়েড টিকা দেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর জানান, বাংলাদেশে টিকা দিয়ে প্রতিরোধযোগ্য মারাত্মক সংক্রামক রোগগুলোর মাঝে টাইফয়েড জ্বর অন্যতম। মূলত দূষিত পানি, খাবারের মাধ্যমে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে ছড়ানো রোগটিতে বেশি আক্রান্ত হয় নয় মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুরাই। ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রায় আট হাজার নাগরিক টাইফয়েড জ্বরে মৃত্যুবরণ করেন, যার ৬৮ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ছয় হাজার জনই শিশু। টাইফয়েড টিকা নিলে এই জ্বরে আক্রান্তের হারের পাশাপাশি এন্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ বহুলাংশে কমে আসবে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, ইপিআই টিকা কার্যক্রমে বছরে প্রায় ৪২ লাখ শিশুকে বিভিন্ন প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগের টিকা দিয়ে প্রায় এক লাখ শিশুমৃত্যু রোধ সম্ভব হচ্ছে। তাই দেশের সব শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এক ডোজ টাইফয়েড টিকা গ্রহণ নিশ্চিতের আহ্বান জানান তিনি।

‌’আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুরক্ষিত হোক আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ, গড়ে উঠুক সুস্থ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’- বলেন ডা. সায়েদুর রহমান।

তিনি জানান, এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, কওমি মাদ্রাসা, স্কাউটস ও গার্লস গাইডের মতো সংস্থাগুলোরও সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে।

ডা. রহমান জোর দিয়ে বলেন, ইপিআইয়ের মাধ্যমে দেয়া এই টিকাটি ডব্লিউএইচও অনুমোদিত এবং সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ। এতে উন্নত রোগ প্রতিরোধে প্রোটিন ও চিনি, উভয় উপাদানই রয়েছে।

তিনি নিশ্চিত করেন, যেকোনো টিকা অনুমোদনের আগে বাংলাদেশ সরকার তার শতভাগ নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। এই টিকাটি সৌদি হালাল সেন্টারের হালাল সনদপ্রাপ্ত এবং পাকিস্তান, নেপাল এবং ভারতের মুম্বাইয়ে সফলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। দেশগুলোর শিশুদের মধ্যে এ টিকার কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

তিনি উল্লেখ করেন, টিকা নেয়ার পরে সাময়িক ব্যথা, হালকা জ্বর বা ক্লান্তি হতে পারে। তবে ভয়জনিত কারণে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া সম্ভব, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘ম্যাস সাইকোজেনিক ইলনেস’ নামে পরিচিত। এটি টিকার কারণে হয় না।

এদিকে এই ক্যাম্পেইনের সফল বাস্তবায়নে VaxEPI প্লাটফর্মের মাধ্যমে শিশুদের নিবন্ধন চলমান। টাইফয়েড টিকা পেতে Vaxepi.gov.bd ওয়েবসাইটে শিশুদের ১৭ সংখ্যার জন্মনিবন্ধন তথ্য দিয়ে খুব সহজেই নিবন্ধন করা হচ্ছে। বুধবার (৮ অক্টোবর) পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়েছে প্রায় এক কোটি ৬৮ লাখ শিশু। যাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ নেই, তাদেরকেও বিশেষ ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন ছাড়াই টিকা দেয়া হবে।

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১